বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী কোনো দেশের কাছ থেকে কিছু কেনা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যাদের দিয়ে আমরা জঙ্গিবাদ নির্মূল করি, তাদের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি বলেছি যে যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের কাছ থেকে আমি কিছু কিনব না।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা আমার কী করবেন? আমার বাবা-মা, ভাই সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমার আর হারানোর কিছু নেই। আমি শুধু আমার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
‘৪র্থ শিল্পবিপ্লবে উদ্ভাবনী প্রকৌশল’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আজ শনিবার রাজধানীর আইইবি প্রাঙ্গণে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) পাঁচ দিনব্যাপী ৬০তম কনভেনশন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও এর সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং এর পরিবর্তে সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে র্যাবের অসাধারণ সাফল্য তুলে ধরেছে।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকৌশলীদের দেশের উন্নয়নের মূলশক্তি হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে এবং আপনাদের কাছে এটাই আমার একমাত্র চাওয়া। ইনশা আল্লাহ, বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি কখনোই কোনো দেশ বা সংস্থার দেওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থের কোনো প্রকল্প গ্রহণ করেন না; যা দেশ ও জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না
দেশের জনগণের উন্নয়নে প্রকৌশলীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্বে থাকায় বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তিনি আশা প্রকাশ করেন, সবাই আন্তরিক থাকবেন; যাতে উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা যায়।
‘আমাদের লক্ষ্য, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে “স্মার্ট বাংলাদেশ” হিসেবে গড়ে তোলা’ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁরা ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ বাস্তবায়ন করবেন; যাতে দেশের কেউ আর ভোগান্তির শিকার না হন এবং এতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম একটি সম্মানজনক ও উন্নত জীবন পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি, আপনারা (প্রকৌশলীরা) বিষয়টি মনে রেখে কাজ করবেন।’
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতি স্পষ্টভাবে বলেন, তাঁর সরকার কখনোই কোনো অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে না। তিনি বলেন, যে বিষয়টির ওপর তিনি সব সময় জোর দেন, তা হলো, কোন পরিকল্পনা দেশের জনগণের জন্য সর্বোত্তম সুবিধা বয়ে আনবে ও সরকার তা থেকে আয় করতে সক্ষম হবে। তিনি আরও বলেন, মেগা প্রকল্প নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু প্রকল্পগুলো শেষ হলেই এর সুফল সাধারণ মানুষ ভোগ করছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, যাঁরা এসব মেগা প্রকল্পের সমালোচনা করেন, তাঁরা কী বলতে চান? তিনি বলেন, ‘আমরা যে প্রকল্পই নিই না কেন, প্রথমেই আমরা ভাবি, দেশের মানুষ কতটা উপকৃত হবে। আর সেই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কী রিটার্ন (প্রাপ্তি) হবে ও কত দ্রুত সেটা আসবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি কখনোই কোনো দেশ বা কোনো সংস্থার দেওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থের কোনো প্রকল্প গ্রহণ করেন না; যা দেশ ও জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের (প্রকৌশলীদের) অবহিত করতে চাই, আমি এটা কখনোই মেনে নেব না। কারণ, আমি সেটাই করব; যা আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে।’
সরকার যে উন্নয়ন করেছে, তা রাজধানীকেন্দ্রিক নয় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত উন্নয়ন করেছি। সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ, যোগাযোগব্যবস্থার মানোন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হওয়ায় গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে অভিবাসনের প্রবণতা কমেছে।’
সারা দেশে শতাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বিচার কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা শিল্পায়নের জন্য বিশেষ অঞ্চল সৃষ্টি করেছি, যেখানে সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আমাদের আবাদি জমিকে রক্ষা করতে হবে।’ দেশে খাদ্য ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও কৃষি খাতে দীর্ঘ সময় ধরে ভর্তুকি দেওয়া অব্যাহত না রাখার বিষয়ে তাঁর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে হবে। এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’
আইইবির সভাপতি প্রকৌশলী মো. নজরুল হুদার সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ইনস্টিটিউশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহাদাত হোসেন। অনুষ্ঠানে আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোল্লা মো. আবদুল হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের ওপর গানসহ একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্তরের প্রকৌশলী, কেন্দ্র, উপকেন্দ্র, প্রকৌশল বিভাগ ও এএমআরই বিভাগের স্নাতকদের হাতে পুরস্কার (স্বর্ণপদক) ও সনদপত্র তুলে দেন।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা আসছে। আমরা ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রেখেছি ও ঝড়টি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।’
ঘূর্ণিঝড়ের সময় পানি জমে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাই সেই সময় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এই পদক্ষেপ সাময়িক দুর্ভোগ সৃষ্টি করলেও এতে মানুষের জীবন রক্ষা পাবে।