রাজধানীর পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করবেন সেখানে নির্মমভাবে হত্যার শিকার সেনাকর্মকর্তাসহ অন্যদের স্বজনেরা। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এ অভিযোগ দাখিল করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া হলে ‘পিলখানায় ৫৭ অফিসারসহ ৭৪ জনের হত্যার বিচার এবং শহীদ সেনা দিবসের দাবিতে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পিলখানায় হত্যার শিকার কর্নেল কুদরত ইলাহীর সন্তান আইনজীবী সাকিব রহমান। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনসহ পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা বিডিআর বিদ্রোহের মামলাটি আপিল বিভাগে থাকলেও সর্বশেষ পরিস্থিতি হত্যার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের জানা নেই বলে উল্লেখ করেন সাকিব রহমান। তিনি বলেন, ‘মামলা চলাকালীন এই দীর্ঘ সময়টাতে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। আমার যাঁরা ভুক্তভোগী, তাঁরাই মামলার পরিস্থিতি জানি না, দেশের মানুষ কীভাবে জানবে?’
ওই হত্যাকাণ্ডে পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রকারীরা গত সরকারের সময় ক্ষমতায় ছিল মন্তব্য করে সাকিব রহমান বলেন, ‘আমাদের প্ল্যান অব অ্যাকশন (কর্মপরিকল্পনা) হচ্ছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কমপ্লেন (অভিযোগ) ফাইল করব।’
আইনজীবী সাকিব রহমান বলেন, ‘শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব। আন্তর্জাতিক আইনের “ডকট্রিন অব কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি” অনুযায়ী শেখ হাসিনাকেও বিচারের মুখোমুখি আনা সম্ভব। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে তিনিও দায় এড়াতে পারেন না। তাঁর বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ করব।’ তিনি আরও বলেন, তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা—বিশেষ করে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের (এনএসআই) তৎকালীন কর্মকর্তা যাঁরা ছিলেন; এবং সে সময়ের কিছু সাংবাদিক যাঁরা ভুল ন্যারেটিভ (বয়ান) সৃষ্টি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হবে।
তৎকালীন বিডিআরের প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকীন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার চায়নি গুম-খুনের বিচার হোক। যেহেতু এখন বাধা নেই, তাই বিডিআর সদস্য হত্যার তদন্ত দ্রুত শেষ করে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হোক।’
পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের দিনকে শহীদ দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন রাকীন আহমেদ। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়ায় যাঁদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের জন্য সুনির্দিষ্ট একটি ব্যবস্থা করতে হবে।
পিলখানায় নিহত কর্নেল মজিবুল হকের স্ত্রী নাহরীন ফেরদৌসী বলেন, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আগেই ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করে দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে। তিনি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে নতুনভাবে তদন্ত শুরুর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘প্রস্তাবিত ইনকোয়ারি (তদন্ত) কমিশনের অগ্রগতি আমাদের জানানো হোক। ইতিপূর্বের সব তদন্তের প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক।’
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শিকার লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফুর রহমান খানের মেয়ে ফাবলিহা বুশরা। এ সময় আরও বক্তব্য দেন পিলখানায় নিহত লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী রবি রহমানের স্ত্রী ফৌজিয়া রশিদ ও তাঁর ভাই কাজী ওলি রহমান, সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম, কর্নেল কুদরত এলাহির স্ত্রী লবী রহমান প্রমুখ।