ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলে তিনটি ভবন। জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা থাকেন প্রধান ভবনে (পুরোনো ভবন)। এ ভবনে আসন পাওয়াকে ‘সম্মানের’ মনে করা হয়। জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী হয়েও ভবনটিতে আসন পাননি হল শাখা ছাত্রলীগের একজন নেতা।
এদিকে নেতার আসন না পাওয়াকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার রাতে ওই হলে মারধরে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। আবারও মারামারির আশঙ্কা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন তাঁরা।
শহীদুল্লাহ্ হলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য থাকা ১৩টি আবাসিক হলে আসন বরাদ্দে প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কে, কোন কক্ষে থাকবেন, তা ঠিক করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতারা। হলগুলোতে ছাত্রসংগঠনটির বিভিন্ন পক্ষ আসন ভাগ–বাঁটোয়ারা করে থাকে।
দেড় মাস আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর চারজন নেতাকে কেন্দ্র করে হলগুলোতেও নতুন নতুন পক্ষ তৈরি হয়েছে। আসন বাঁটোয়ারা নিয়ে নিয়মিতই দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে পক্ষগুলো। এরই ধারাবাহিকতা শহীদুল্লাহ্ হলের সর্বশেষ মারামারি।
শহীদুল্লাহ্ হলের প্রাধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাবেদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হলে উত্তেজনার বিষয়টি জেনেছি। আবাসিক শিক্ষকেরা ঘটনাস্থলে ছিলেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শহীদুল্লাহ্ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম আগে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদের অনুসারী ছিলেন। নতুন কমিটি হওয়ার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসানের অনুসারী হন। সহসভাপতি জাহিদুল ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ও তাঁর সহপাঠীরাই এখন হলটির জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী।
জাহিদুলের সহপাঠীরা ইতিমধ্যে শহীদুল্লাহ্ হলের প্রধান ভবনে আসন পেলেও তাঁকে আসন দেওয়া হয়নি। তাঁকে প্রধান ভবনে আসন দিতে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান হল শাখার সভাপতি জাহিদুল ইসলামকে অনুরোধ করেন। বৃহস্পতিবার রাতে জাহিদুল সভাপতি জাহিদুলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে যান। এরপর রাতেই সভাপতির সামনে তাঁর অনুসারীরা সহসভাপতির ওপর হামলা করেন।
এদিকে সহসভাপতি জাহিদুলের ওপর হামলার খবর পেয়ে হলে যান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান। দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে তাঁরা হামলাকারী হল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মুশতাক শাহরিয়ার ওরফে সজীবকে হল থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু মুশতাক হল ছাড়েননি। পরদিন শুক্রবার রাতে তানভীর হাসানের অনুসারীরা মুশতাকের কক্ষটি দখল করতে যান। এ সময় তাঁরা মুশতাকের জিনিসপত্র বের করে দিয়ে তাঁর আসনে অন্য দুজনকে ওঠান।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাত ১২টার পর সভাপতি জাহিদুলের অনুসারী হল কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপসম্পাদক মারুফ আল মুকিত তানভীরের অনুসারী হল শাখার শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক খায়রুল বাশারকে মারেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারামারিতে পাঁচ–ছয়জন আহত হন। তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
মারামারির বিষয়ে সহসভাপতি জাহিদুল আজ শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান ভবনে আসন দেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে গেলে সভাপতি জাহিদুল আমাকে গালিগালাজ করেন। তিনি তাঁর অনুসারীদের বলেন যে আমি তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছি। কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাহিদুলের সামনেই তাঁর অনুসারীরা আমার ওপর হামলা করেন।’ তিনি বলেন, ‘পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ দুই নেতার নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে শুক্রবার অন্যরা কক্ষ থেকে মুশতাকের জিনিসপত্র বের করে দিয়ে দুজনকে ওঠান। এ নিয়ে খায়রুলকে আঘাত করেন জাহিদুলের অনুসারী মারুফ।এরপর হলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। এখনো ঘটনার সমাধান হয়নি।’
তবে মারামারির ঘটনাকে ‘ভুল–বোঝাবুঝি’ বলছেন সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সিটের সমস্যা নিয়ে শুক্রবার রাতে পোলাপানের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি অবগত আছেন। তাঁরাই এর সমাধান করবেন।’
এদিকে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে আবারও মারামারি হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন হলটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তানভীর হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হলে সিটসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কোনো মারামারি হয়নি; বরং হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে নতুন পক্ষগুলোর একটু মনোমালিন্য হয়েছে।’
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তিগত বলয়ে থেকে যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হলের পরিবেশ সুন্দর-সুশৃঙ্খল রাখতে হবে।’