চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় মুরগির একটি দোকানের সামনে টাঙানো রয়েছে একটি নোটিশ। তাতে লেখা ‘এখানে মুরগির মাংস টুকরা হিসেবেও বিক্রি করা হয়।’
দোকানটির নাম সেলিম পোলট্রি শপ। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এই দোকানে টুকরা হিসেবে মুরগির মাংস বিক্রি চালু হয়েছে। দোকানটিতে ওজন অনুযায়ী একটি মুরগি কাটার পর চার ভাগ করে টুকরা হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের বাজারে বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। অন্যদিকে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা। সেই হিসাবে ব্রয়লার মুরগির মাংসের প্রতি টুকরার দাম পড়বে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা। আর সোনালি মুরগির মাংসের প্রতি টুকরার দাম পড়বে ৭৭ থেকে ৮০ টাকা।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে চকবাজার এলাকায় কথা হয় সেলিম পোলট্রি শপের ব্যবস্থাপক আবদুর কাদেরের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখনো প্রচার না হওয়ায় অনেকেই জানেন না এই উদ্যোগ সম্পর্কে। একটি মুরগি কেটে রেখে দিলে তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই যাঁরা ভাগ হিসেবে নিতে চান, তাঁরা একসঙ্গে এলে তাঁদের সামনেই ভাগ করে দেওয়া যাবে। মানুষের মধ্যে প্রচার হলে মানুষ টুকরা হিসেবে কিনতে আগ্রহী হবেন।
চকবাজারে বাজার করতে আসা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জামাল বলেন, উদ্যোগটি ভালো। প্রচার হলে অবশ্যই ক্রেতা বাড়বে। শুধু চকবাজার নয়, নগরের সব বাজারে এভাবে বিক্রি হলে নিম্ন আয়ের মানুষ সাধ্যের মধ্যে মাংস কিনতে পারবেন।
টুকরা হিসেবে মুরগি বিক্রয়ের উদ্যোগটি নিয়েছেন চকবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা মো. কায়সার আলী চৌধুরী। তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে মুরগির দাম মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। শুধু মুরগি নয়, অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও অনেক বেশি। নিম্নবিত্ত ও ব্যাচেলর থাকা ছাত্ররা যাতে সাধ্যের মধ্যে মুরগির মাংস কিনতে পারেন, সেই চিন্তা থেকে চকবাজারে টুকরা হিসেবে মুরগি বিক্রির বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি সেলিম পোলট্রি শপে কথা বলেন তিনি। প্রথমে রাজি না হলেও পরে তাঁরা রাজি হন।
মো. কায়সার আলী চৌধুরী বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে টুকরা হিসেবে মাছ-মাংস বিক্রি হয় অনেক আগে থেকেই। তবে এখানে এখনো এর প্রচার নেই। তাই অনেকেই বলতে লজ্জা পান। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষেরা সরাসরি বলতে পারেন না। আশপাশের দোকানগুলোতেও একইভাবে টুকরা হিসেবে বিক্রির ব্যাপারে কথা বলা হবে। সব দোকানে এভাবে বিক্রি হলে মানুষ আর বলতে ইতস্তত বোধ করবেন না। চেষ্টা থাকবে গরুর মাংস ও মাছের বাজারেও এই উদ্যোগ নেওয়ার।
বাজার ঘুরে দেখা গেল, মুরগির পাশাপাশি বাজারে অন্যান্য মাছ-মাংসের দামও বাড়তি। হাড়সহ গরুর মাংস ৬৮০ থেকে ৭২০ টাকা। আর হাড়ছাড়া গরুর মাংস ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজিতে। মাছবাজারে আকারভেদে তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২৪০, রুই ১৮০ থেকে ২৬০ ও কাতলা ২৩০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগি বিক্রেতা আবদুল মান্নান বলেন, বিভিন্ন উৎসবের কারণে মুরগির চাহিদা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে মুরগি বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। দাম বাড়ার কারণে আগের তুলনায় মুরগি বিক্রি হচ্ছে কম। সামনে পবিত্র শবে বরাতে ও রোজায় মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানালেন বিক্রেতারা।
অন্যান্য নিত্যপণ্যের মধ্যে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১০৮ থেকে ১১২ টাকায়। দেশি মসুর ডাল ১৩৫-১৪০, মোটা দানার মসুর ডাল ১০০-১১০, মানভেদে ছোলা ৮২ থেকে ৯৫, বোতলজাত সয়াবিন (১ লিটার) ১৮০ থেকে ১৯০, পেঁয়াজ ৩৫-৪০, আকারভেদে রসুন ১১০ থেকে ১৪০, প্যাকেটজাত আটা ৬৫ থেকে ৬৮ ও প্যাকেটজাত ময়দা ৭২ থেকে ৭৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকায়। এ ছাড়া কাঁচা মরিচ ১১০ থেকে ১২০, শিম ৩০ থেকে ৩৫, বেগুন ২০ থেকে ২৫, আলু ২০ থেকে ২৫, মিষ্টিকুমড়া ২৫-৩০ ও টমেটো ১৫ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।