তিন মেয়ের দিকে তাকিয়ে ভারতের রোহিঙ্গারা

২০২২ সালে ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেছেন তাসমিদা জোহর নামের এক তরুণী। এটা খুবই সাধারণ তথ্য। কিন্তু মিয়ানমারে জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা মেয়ে তাসমিদার স্নাতক হওয়াটা মোটেও কোনো সাধারণ বিষয় নয়। ভারতে অস্থায়ী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী স্নাতক তিনি। কীভাবে তিনি স্নাতক হলেন, সেই সংগ্রামের কথা শুনলে বোঝা যাবে, কেন তাঁকে নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার পর প্রথম দুই বছর পড়াশোনা হয়নি তাসমিদা জোহরের। পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাজের খোঁজে ছুটতে হয়েছিল এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়

রোহিঙ্গা তরুণী বছর পঁচিশের তাসমিদা জোহর ঠিক কীভাবে স্নাতক হলেন, সেটা লিখতে গেলে গুটিকয় বই লিখতে হবে। বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র বা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বানাতে হতে পারে। ব্যাপারটা শুনে অনেকে আশ্চর্য হতে পারেন। সত্যিই তো, এমনিতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে স্নাতক হওয়া বড় কোনো বিষয় নয়।

কিন্তু তাসমিদার স্নাতক হওয়াটা কোনো সাধারণ বিষয় নয়। কারণ, তিনি মিয়ানমারে জন্মানো এক রোহিঙ্গা মেয়ে। ভারতে অস্থায়ী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী স্নাতক তিনি।

২০২২ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেছেন তাসমিদা। বিষয়টা শুনতে সহজ, কিন্তু কীভাবে তিনি স্নাতক হলেন, সেই সংগ্রামের কথা শুনলে বোঝা যাবে কেন তাঁকে নিয়ে বিশ্বের তাবৎ পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে। সম্প্রতি মুঠোফোনে তাসমিদার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এ সময় উঠে আসে তাঁর কঠিন জীবনসংগ্রামের গল্প।

কেন মিয়ানমার ছাড়তে হলো

তাসমিদার পরিবার ২০০৫ সালে উত্তর রাখাইনের বুথিডং ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন তাঁদের অবস্থা খারাপ ছিল না। তাঁর বাবা ফল, সবজি ও অন্য টুকিটাকি জিনিসের ব্যবসা করতেন। বুথিডং আর ইয়াঙ্গুনে তাঁর আসা–যাওয়া ছিল। তখন তাসমিদা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তেন।

গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শেষ থেকে অবস্থা পাল্টাতে শুরু করল। যাঁদের অবস্থা একটু ভালো ছিল, তাঁদের কাছ থেকে পুলিশ মাঝেমধ্যে টাকা নিত, আটকেও রাখত। তখন থেকে গ্রেপ্তার বেড়ে গেল। মাঝেমধ্যেই তাসমিদার বাবাকে তুলে নিয়ে যেত। সঙ্গে শুরু হলো নতুন আরেক অত্যাচার। বাড়ির জন্তু-জানোয়ার, হাঁস-মুরগি নিয়ে যেতে শুরু করল। এমনকি পোষা কুকুরও বাদ ছিল না। তবে ২০১২ সাল থেকে যে গণহত্যা শুরু হয়েছিল, সেটা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

তাসমিদাদের নাগরিক পরিচয়ের প্রমাণপত্র গত শতকের আশির দশকের শুরুতেই কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তাসমিদা বলেন, ‘আমার জন্মের আগেই নতুন পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, আমরা বাঙালি মুসলমান, বার্মার “মেহমান”। এ কারণে খুব ভয়ে ভয়ে থাকতাম। একদিন আমার মামাকে বেধড়ক মেরে দাঁত ফেলে দিল। এভাবে আমাদের ওপর নিয়মিত পুলিশি হেনস্তা শুরু হলে আমাদের পরিবার ২০০৫ সালে মিয়ানমার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।’

বছর বিশেকের জোহরাই দিলেন উত্তরটা। বললেন, ‘আমরা যদি জানতে পারতাম আমাদের অধিকার কী এবং আমরা দেশে থেকে লড়তে পারতাম, তবে নিশ্চয়ই আজ আমাদের এই অবস্থা হতো না। লড়াই করে টিকে থাকার চেষ্টা করতাম। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ছিল না। আমাদের প্রজন্মের রোহিঙ্গারা একটু পড়াশোনা করতে পারলে, একটু শিখতে-জানতে-বুঝতে পারলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের লড়াই হয়তো আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

এবারে কার্যত পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল তাসমিদার। আরও হাজার হাজার পরিবার কাপড়চোপড় বেঁধে রওনা দিল বুথিডংয়ের উত্তরে মংডোর উদ্দেশে। তাদের লক্ষ্য ছিল নাফ নদী পেরিয়ে ছোট নৌকা বা স্টিমারে চেপে বাংলাদেশের টেকনাফে পৌঁছানো।

তাসমিদা যতটুকু স্মরণ করতে পারেন, ‘একেক ব্যক্তি এক–দেড় লাখ কিয়াত (মিয়ানমারের মুদ্রা) খরচ করে দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এসেছিলাম। প্রথম দুই বছর আর পড়াশোনা হয়নি। কারণ, ছাত্রী থেকে রাতারাতি দিনমজুরে পরিণত হলাম। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতাম কাজের খোঁজে। স্কুলে ভর্তি হওয়া বা নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার প্রশ্নই ছিল না। বেঁচে থাকাটাই ছিল এক বিস্ময়।’ তাসিমদার মুখে হাসি।

২০০৭ সালে আবার নতুন করে কক্সবাজারের কাছে এক স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন বছর দশকের তাসমিদা ও তাঁর এক ভাই। বাংলাদেশেও একটি নয়, বেশ কয়েকটি স্কুলে পড়েছেন। যেখানে তাঁর আব্বা কাজ পেতেন, সেখানে গিয়ে পড়তেন। মাদ্রাসায় আরবি পড়েছেন। এক মাদ্রাসা থেকে আরেক মাদ্রাসায় গেলে আবার নতুন করে আরবি শিখতে বলত। ফলে অনেকবারই তাঁকে গোড়া থেকে পড়াশোনা শুরু করতে হয়েছে।

গন্তব্য ভারত

২০১২ সালে তাসমিদার পরিবার ভারতে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক কেন তাঁরা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে এলেন, সেটা খুব স্পষ্ট নয় তাসমিদার কাছে। তাঁর ধারণা, সম্ভবত কাজের আশায় তাঁর পরিবার এমনটা করেছিল। তবে কীভাবে বাংলাদেশ ছেড়ে তাঁর পরিবার সীমান্ত পথে ভারতে এল, সেটা তিনি জানেন না।

তাসমিদা বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে এসে খুব যে সুবিধা হয়েছিল, এমনটা নয়। আমাদের প্রথমে হরিয়ানায় পাঠানো হলো। সেখানে আশ্রয়শিবিরে এক বছর ছিলাম। ওখানেও আমরা দু–তিন জায়গায় ছিলাম। পড়াশোনা দূরের কথা, বেঁচে থাকাই কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রায় ভিক্ষা করে আমাদের দিন চালাতে হচ্ছিল।’

ভাষা নিয়েও সমস্যায় পড়েছিলেন তাসমিদা। বলছিলেন, ‘আমি হিন্দি ভাষা বলতে বা বুঝতে পারতাম না। আমার ভাষা জ্ঞান একেবারেই হারিয়ে গিয়েছিল। মিয়ানমারে শিখেছিলাম সামান্য ইংরেজি আর বার্মিজ, বাংলাদেশে বাংলা এবং ভারতে এসে হিন্দি। ১০ বছর বয়সে এতগুলো ভাষা শিখতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে পড়েছিলাম।’

এই সময় তাসমিদার আব্বাকে দিল্লি যেতে বললেন তাঁর বড় দাদা আলী জোহর। তিনি আগেই ভারতে এসেছেন। রোহিঙ্গা পুরুষদের মধ্যে তিনি ভারতে প্রথম স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করেছেন। কাজ করেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক দপ্তর ইউএনএইচসিআরের সহযোগী সংস্থা ডন বসকো টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে।

দিল্লিতে থিতু তাসমিদারা

তাসমিদা বলে যাচ্ছিলেন, ‘আমরা দিল্লি এসে প্রথমে বিকাশপুরীতে উঠলাম। তারপর আরেক জায়গায়। ক্লাস টেন পড়লাম ডন বসকোর স্কুলে। তারপর দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়লাম জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যেই দুবার বিপত্তি ঘটল। কোনো অজ্ঞাত কারণে দক্ষিণ দিল্লির কালিন্দী কুঞ্জ অঞ্চলের যে শিবিরে আমরা থাকি, সেখানে টিন ও প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি বস্তিতে আগুন লেগে খাতাপত্র সব পুড়ে গেল। আমার আরও কিছুটা সময় নষ্ট হলো।’

কিন্তু তাসমিদাকে দাবিয়ে রাখা সম্ভব নয়, বলছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী গীতাঞ্জলি কৃষ্ণ। তিনি দীর্ঘ সময় তাসমিদার সঙ্গে কাজ করছেন।

গীতাঞ্জলি বলছিলেন, তাসমিদার সঙ্গে সাধারণ মানুষের লড়াইয়ের কোনো তুলনা হয় না। তাঁকে প্রথমত রোজ বাঁচার লড়াই করতে হয়। তারপর পড়াশোনার জন্য আরও কয়েক শ গুণ বেশি পরিশ্রম করতে হয়। মিয়ানমারে তিনি যে পড়াশোনা করেছিলেন, বাংলাদেশে গিয়ে তা শূন্যে পরিণত হলো। বাংলাদেশে যা পড়লেন, তা ভারতে কাজে লাগল না। আবার গোড়া থেকে শুরু করতে হলো। এভাবে তিনি স্নাতক পাস করেছেন। বুঝতেই পারছেন, তাঁকে পেছন থেকে টেনে রাখা সম্ভব নয়।

তাসমিদা চেয়েছিলেন আইনে পড়াশোনা করতে, যাতে রোহিঙ্গা সমাজের পাশে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। জানালেন, তিনি আইন নিয়ে পড়তে চেয়েছিলেন, সেভাবে জামিয়াতে আবেদন করেছিলেন। তাঁর নামও তালিকায় উঠেছিল। কিন্তু তাঁদের মতো শিক্ষার্থীদের আইন নিয়ে পড়ার প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। সেই অনুমতি গত চার বছরেও আসেনি।

এরপরও হাল ছাড়েননি তাসমিদা। ভবিষ্যতে আইন নিয়ে পড়তে চান। এ জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে তিনি স্নাতক করেছেন, সঙ্গে ছিল ইংরেজি, হিন্দি, ইতিহাস। ভারতের রাজনীতি অনেকটা পড়তে হয়েছে, পড়তে হয়েছে গান্ধীজির জীবনীও।

২০১৯ সালে তাসমিদা স্নাতক শুরু করেন, শেষ হয় ২০২২ সালের আগস্টে। কানাডার এক বিশ্ববিদ্যালয় আবার স্নাতক স্তরে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে আটকে যায়। তাঁকে স্নাতকোত্তর স্তরে বৃত্তির আবেদন করতে বলা হয়।

ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের পরিচালক সাব্বের খিও মিন বলছিলেন, ‘তাসমিদা কানাডায় যেতে না পেরে হয়তো কিছুটা দমে গেছেন। তবে আমরা জানি, আগামী বছর তিনি অবশ্যই আবেদন করবেন এবং বৃত্তি পাবেন। তাঁকে দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়।’

এভাবে এতটা পথ পেরিয়ে আসা কি সম্ভব? প্রতিবেদনে পড়ে, তাসমিদার সঙ্গে কথা বলে, অন্যদের কাছ থেকে তাঁর সম্পর্কে তথ্য নিয়েও কেমন যেন বিশ্বাস হতে চাইছিল না। সরাসরি তাসমিদাকেই তাই জিজ্ঞাসা করলাম, কীভাবে তিনি এটা সম্ভব করলেন?

‘ঠিক আমি একা সম্ভব করেছি, এটা বলা ঠিক হবে না,’ সপাট জবাব তাসমিদার।

তাসমিদা বলছিলেন, ‘আমার মা আমিনা খাতুন (৫৬) না থাকলে এটা সম্ভব হতো না। পড়াশোনা করার একটা ইচ্ছা আমার ছিল ঠিকই। কিন্তু মা বারবার বলে যান, আমাদের যা অবস্থা, তার যদি কিছুমাত্র উন্নতি করতে হয়, তাহলে পড়াশোনাই একমাত্র রাস্তা। এভাবেই আমার দাদা পড়েছেন এবং তাঁকে দেখে আমি পড়েছি। একটা উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন। আমার যখন কোনো পরীক্ষা আসে, তখন মা সারা রাত জেগে বসে থাকেন, যাতে আমি ঘুমিয়ে না পড়ি।’

তাসমিদার এই অসম যুদ্ধে দিল্লির একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, তাঁর শিক্ষক থেকে সহপাঠীরা পাশে দাঁড়িয়েছেন, সে কথাও বলতে ভুললেন না তাসমিদা।

আর এটাই তাসমিদাকে করে তুলেছে ৫ রাজ্যের ৫০টি শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের ‘রোল মডেল’। বলে রাখা ভালো, ভারতে অস্থায়ী শিবিরে ১৭ হাজার ৮২৫ রোহিঙ্গা বসবাস করে। এর বাইরেও রোহিঙ্গারা ভারতের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কারাগারে আছে অন্তত ৭৬৩ জন। তাঁদের অনেকেই আজ তাসমিদার উদাহরণ দিচ্ছেন সন্তানদের। তাঁর নামে মেয়েদের নামও রাখছেন কেউ কেউ।

তাসমিদার পথে আরও দুই মেয়ে

তাঁদেরই একজন জোহরা বিবি ইন্দিরা গান্ধী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তিনি পড়ছেন সমাজবিদ্যায়। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের পরিবারের জোহরা বুথিডং থেকে একইভাবে বাংলাদেশ থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লি এসেছেন। তবে তাঁরা এসেছেন তাসমিদার প্রায় এক যুগ পরে ২০১২ সালে। ওই সময় রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপরে গণ-অত্যাচার শুরু হয়ে গেছে। জোহরা মানবাধিকারকর্মী হতে চান। কিন্তু কেন?

বছর বিশেকের জোহরাই দিলেন উত্তরটা। বললেন, ‘আমরা যদি জানতে পারতাম আমাদের অধিকার কী এবং আমরা দেশে থেকে লড়তে পারতাম, তবে নিশ্চয়ই আজ আমাদের এই অবস্থা হতো না। লড়াই করে টিকে থাকার চেষ্টা করতাম। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ছিল না। আমাদের প্রজন্মের রোহিঙ্গারা একটু পড়াশোনা করতে পারলে, একটু শিখতে-জানতে-বুঝতে পারলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের লড়াই হয়তো আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

মুক্ত স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাসমিদা আর জোহরার থেকে সামান্য ছোট মিজান হুসেন। তাঁরও রোল মডেল তাসমিদা। তবে সামান্য ছোট বলেই বোধ হয় তাঁর ভয়টা একটু বেশিই।

তাই হয়তো মিজান বলছিলেন, ‘মাঝেমধ্যে শুনি, আমাদের বন্দিশিবিরে বা দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবে। হয়তোবা ফেরত পাঠাবে মিয়ানমারে। একটি মেয়েকে তো তাঁর পরিবারের কাছ থেকে আলাদা করে পাঠিয়েও দিল। বড় ভয় লাগে। এর মধ্যে পড়াশোনা করতে কি ইচ্ছা করে?’

আপনার এই যে চিন্তা, সেগুলোকে খাতায় বা ডায়রিতে লিখে রাখেন না কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে মিজান বললেন, তিনি লিখতেন। কিন্তু ২০১৮ ও ২০২১ সালে দুবার কালিন্দী কুঞ্জের আশ্রয়শিবিরে আগুন লেগে তাঁর ডায়েরি পুড়ে গেছে। এরপর আর লেখেননি। তবে স্নাতক তাঁকে হতেই হবে।

মিজানের মা–ও এমনটাই বলেন। আর যখন বলেন, তখন বারবার ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে ওই তাসমিদারই উদাহরণ দেন।

মিজান হেসে বলেন, ‘ভবিষ্যতের রোহিঙ্গাদের দিকে তাকিয়ে আমাকে পড়াশোনাটা হয়তো চালিয়ে যেতে হবে।’

এই তিন মেয়ের দিকেই আপাতত তাকিয়ে ভারতের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়। তাঁদের জয় যেন গোটা সমাজের জিতে যাওয়ার গল্প। সেটা বোঝেন তাসমিদা, জোহরা, মিজান। তাই বিদেশের মাটিতে ২৪ ঘণ্টা, ৩৬৫ দিন এক অসম যুদ্ধ লড়ে চলেছেন তিন রোহিঙ্গা কন্যা। এই লড়াই চলবে এবং তাঁরাই জিতবেন—এই বিশ্বাস তিনজনেরই।