স্টার্টআপব্লিঙ্কের প্রতিবেদন

স্টার্টআপে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ

  • স্টার্টআপের শীর্ষ পাঁচটি দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইসরায়েল, কানাডা, সুইডেন ও সিঙ্গাপুর।

  • স্টার্টআপের শীর্ষ পাঁচটি শহর হচ্ছে সান ফ্রান্সিসকো, নিউইয়র্ক, লন্ডন, লস অ্যাঞ্জেলেস ও বোস্টন।

স্টার্টআপে প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে ভালো হলেও প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এখনো পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। দেশ ও শহরের র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ও ঢাকা বেশ এগিয়েছে, কিন্তু এশিয়ায় তলানিতে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে অবস্থান করছে।

স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম নিয়ে গবেষণা করা আন্তর্জাতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘স্টার্টআপব্লিঙ্ক’ সম্প্রতি ‘গ্লোবাল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম ইনডেক্স ২০২৪’ প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ আগের বছরের চেয়ে ছয় ধাপ এগিয়ে ১০০টি দেশের মধ্যে ৮৩তম স্থানে রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত ১৯তম, পাকিস্তান ৭১তম ও শ্রীলঙ্কা ৭৬তম অবস্থানে আছে। অর্থাৎ তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবার নিচে।

স্টার্টআপের শীর্ষ পাঁচটি দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইসরায়েল, কানাডা, সুইডেন ও সিঙ্গাপুর। শীর্ষ পাঁচটি শহর হচ্ছে সান ফ্রান্সিসকো, নিউইয়র্ক, লন্ডন, লস অ্যাঞ্জেলেস ও বোস্টন।

বাংলাদেশের শীর্ষ স্টার্টআপ হিসেবে পাঠাও, শপআপ, সহজ, আরোগ্য ও টেন মিনিট স্কুলের কথা বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘স্টার্টআপব্লিঙ্ক’ সম্প্রতি ‘গ্লোবাল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম ইনডেক্স ২০২৪’ প্রকাশ করেছে

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সেরা ১৫০টি শহরের তালিকায় ঢুকেছে ঢাকা। শীর্ষ ১ হাজার শহরের মধ্যে ঢাকা ২০২৩ সালের চেয়ে ৭১ ধাপ এগিয়ে ১৪০তম অবস্থানে আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতীয় শহরগুলোর আধিপত্য থাকলেও ঢাকার অবস্থান অষ্টম। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় কৃষিপ্রযুক্তিভিত্তিক স্টার্টআপে ঢাকার অবস্থান সপ্তম।
এশিয়া প্যাসিফিকে ১৯টি দেশের ১৫৯টি স্টার্টআপ অর্থনীতি রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ১৮তম এবং চার বছর ধরে এশিয়া প্যাসিফিকে একই অবস্থানে আছে। বাংলাদেশের পরে আছে শুধু কিরগিজস্তান।

চলতি বছর বিশ্বে সফটওয়্যার ও ডেটাভিত্তিক স্টার্টআপ এগিয়ে ছিল। এরপর আছে, ই-কমার্স ও রিটেইল, স্বাস্থ্য, আর্থিক ও শিক্ষাভিত্তিক স্টার্টআপ। পরিবহনভিত্তিক স্টার্টআপে ঢাকা শীর্ষ ১০০টি দেশের মধ্যে আছে।

বাংলাদেশের শীর্ষ স্টার্টআপ হিসেবে পাঠাও, শপআপ, সহজ, আরোগ্য ও টেন মিনিট স্কুলের কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। স্টার্টআপ খাতকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের সমর্থন প্রয়োজন। ইন্টারনেট স্থিতিশীলতাসহ অবকাঠামোগত উন্নতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি নীতিসহায়তা, করপোরেট উদ্যোগে বিনিয়োগব্যবস্থা ও স্টার্টআপকে সহযোগিতা করার জন্য শিল্প-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতার উন্নতিতেও কাজ করতে হবে।

স্টার্টআপব্লিঙ্কের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ভিসিপিয়াব) সভাপতি ও ই-জেনারেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহসান প্রথম আলোকে বলেন, গুণমান ও বিনিয়োগ স্টার্টআপের জন্য বড় বিষয়। বিশ্বে স্টার্টআপে বড় বিনিয়োগকারীরা অঞ্চলকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগ করে। দক্ষিণ এশিয়ার বিনিয়োগ বেশির ভাগ যায় ভারতে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিনিয়োগ সুবিধা পায় পাকিস্তান। বাংলাদেশ এসব অঞ্চলভিত্তিক কোনো ফোরামের সুবিধা পাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে দেশীয় বিনিয়োগ সহায়তা আরও প্রয়োজন।

তবে র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা প্রসঙ্গে শামীম আহসান বলেন, বাংলাদেশ থেকে হালনাগাদ তথ্য হয়তো ঠিকমতো যায় না এবং নিজেদের সঠিক তথ্য দিয়ে বিশ্বে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রেও দুর্বলতা রয়েছে।

স্টার্টআপে মন্দা কাটছে না

বাংলাদেশের স্টার্টআপ খাত নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিনিয়োগ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তারা। তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশ এ বছরের প্রথম তিন মাসে প্রায় সাত মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে, যা গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের চেয়ে ৭০ শতাংশ কম। এ বিনিয়োগের ৭৫ শতাংশের বেশি এসেছে দেশের বাইরে থেকে।

২০২৩ সালের শেষ তিন মাস বাদ দিলে ত্রৈমাসিক বিনিয়োগে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ১০ মিলিয়নের নিচেই থাকছে।

স্টার্টআপব্লিঙ্ক বলেছে, বিশ্বে ২০১৮ সালের পর ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন বিনিয়োগ এসেছে। এর কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক মন্দা, মূল্যস্ফীতির কথা বলা হয়েছে।

বৈশ্বিকভাবে স্টার্টআপের বিনিয়োগ ২০২১ সালের পর থেকে কমছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে, বিনিয়োগের পরিমাণ পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। ২০২৪ সালের শুরুতেও কোনো উন্নতি নেই।

ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক মন্দা, স্টার্টআপ তহবিলের বৈশ্বিক পতন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতির সঙ্গে আইটি এবং স্টার্টআপ খাতে ছাঁটাইয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

চলতি বছরের প্রথম সাড়ে চার মাসে বিশ্বের প্রযুক্তি খাতে ৭৫ হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মেটা ও গুগলের মতো টেক জায়ান্টরা কর্মী ছাঁটাই করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিকে বেশি ঝুঁকছে।