বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সংবাদ সম্মেলন। ৪ জুন, কলাভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সংবাদ সম্মেলন। ৪ জুন, কলাভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাবি শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালন

সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিমের’ প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে এটি প্রত্যাহারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ওই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে আগামী ১ জুলাই থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

আজ সকাল আটটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। পরে বেলা একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের নিচতলায় সংবাদ সম্মেলন করে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। ফেডারেশনের অন্য দুই দাবি হলো সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।

ফেডারেশনের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ফেডারেশনের মহাসচিব মো. নিজামুল হক ভূইয়া। এতে বলা হয়, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা পেনশনবিষয়ক বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আন্দোলন চলমান। শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা কোনোভাবেই যেন বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অনেকটা প্রতীকী কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে এ বিষয়ে সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণের সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে। বিবৃতি দেওয়া, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি দেওয়া এবং অবস্থান কর্মসূচির মতো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হলেও এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। শিক্ষকদের সঙ্গে দায়িত্বশীল কোনো পক্ষ যোগাযোগও করেনি। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসমাজের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

প্রস্তাবিত প্রত্যয় স্কিম বাস্তবায়ন হলে বর্তমান শিক্ষার্থী, যাঁরা আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় আসতে আগ্রহী, তাঁরাই এর ভুক্তভোগী হবেন বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের চলমান আন্দোলন আগামী দিনের তরুণ সমাজের স্বার্থরক্ষা তথা উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে। আমরা এখনো আশা করি, শিক্ষকসমাজকে যাঁরা সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন, তাঁদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে‍। অন্যথায় ফেডারেশনের চলমান প্রতীকী কর্মসূচি সর্বাত্মক আন্দোলনে পরিণত হবে।

এরপর দাবি আদায়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন নিজামুল হক ভূঁইয়া। ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৪ জুনের মধ্যে ১৩ মার্চ জারি করা প্রত্যয় স্কিমবিষয়ক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি পালিত হবে। এগুলো হলো ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন (তবে পরীক্ষা কর্মবিরতির আওতামুক্ত), ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি (পরীক্ষা কর্মবিরতির আওতামুক্ত) এবং ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ফেডারেশনের সভাপতি মো. আখতারুল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক মো. লুৎফর রহমান, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকনেতা এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া, চন্দ্রনাথ পোদ্দার, এ কে এম গোলাম রব্বানী, আবদুর রহিম প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।