দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেমের নেতৃত্বে সাত সদস্যের এক প্রতিনিধিদল আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইউজিসিতে গিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সেখানেই এই আগ্রহের কথা উঠে আসে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসি জানিয়েছে, সভায় মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার শিকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এটি নারীর ক্ষমতায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এসব ঘটনা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ কমিটি থাকলেও সেটি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে না।
ফওজিয়া মোসলেম বলেন, যৌন হয়রানি ও নারীর প্রতি সহিংসতা যে অপরাধ, সেটি সবার আগে প্রচার করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি নিয়ে করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত শেষ করার অনুরোধ করেন তিনি।
এ সময় ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, যৌন হয়রানি বিষয়ে ইউজিসি ‘জিরো টলারেন্স (শূন্য সহনশীলতা) নীতি’ গ্রহণ করেছে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব ঘটনা ঘটছে, সঙ্গে সঙ্গে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাপক আলমগীর আরও বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্তের আশঙ্কায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির বিষয়টি গোপন করেন। অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কায় বিষয়টি এড়িয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিরাপদ ও নারী শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি প্রতিকারে নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে অভিযোগ কমিটি গঠন, স্বচ্ছ অভিযোগ বাক্স স্থাপন, ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ করা, মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করার পরামর্শ দেন অধ্যাপক আলমগীর।
ইউজিসি জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যৌন হয়রানি ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে প্রতিটি অনুষদে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধে কমিটি গঠন, প্রতিটি অনুষদের ডিন, সব বিভাগের শিক্ষার্থী কাউন্সিলর ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধে নিয়মিত কর্মশালা আয়োজন, শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা বিষয়ে আলোচনা, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরিবিধিতে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা যুক্ত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধে গঠিত কমিটির কার্যক্রম গতিশীল করা এবং অংশীজনদের নিয়ে ইউজিসিকে কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ আয়োজনের ব্যবস্থা করতে সুপারিশ করেছে মহিলা পরিষদ।
সাক্ষাৎকালে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক হাসিনা খান, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুসহ ইউজিসি ও মহিলা পরিষদের কয়েকজন কর্মকর্তা।