রোজিনা ইসলামের পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ

প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম
প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম

প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলামের চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে চিঠি দিয়েছে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। এ লক্ষ্যে রোজিনা ইসলামের পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।

গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠানো ওই চিঠির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস। আজ শুক্রবার এক্সে (সাবেক টুইটার) ওই চিঠির ছবি প্রকাশ করে দূতাবাস লিখেছে, ‘আমরা এর সঙ্গে একমত।’

পাসপোর্ট না পাওয়ার কারণে রোজিনা ইসলাম সাংবাদিকতার প্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারছেন না বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে আরএসএফ। চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে সংগঠনটি বলেছে, ‘রোজিনা ইসলামের মানবাধিকারের সুরক্ষা; বিশেষ করে তাঁর চলাচলের স্বাধীনতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমরা আপনাকে সম্মানের সঙ্গে অনুরোধ জানাচ্ছি। এ লক্ষ্যে আদালতের হেফাজত থেকে তাঁর পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে আপনার ক্ষমতার অধীনে সবকিছু করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে চলমান মামলায় যেন তিনি ন্যায়বিচার পান, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছে প্যারিসভিত্তিক সংগঠনটি। একই সঙ্গে তাঁকে যে ‘বিচারিক হয়রানির’ মুখে পড়তে হচ্ছে, তা শিগগিরই নিরসনের বিষয়টি নিশ্চিত করতেও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আরএসএফের অ্যাডভোকেসি ও অ্যাসিস্ট্যান্স-বিষয়ক পরিচালক অ্যান্টনি বার্নার্ডের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বিষয়গুলো নিয়ে এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল আরএসএফসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন। এবার রোজিনা ইসলামের অধিকারগুলো সুরক্ষিত করার পদক্ষেপ নিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছে তারা।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ঢাকার একটি আদালত রোজিনা ইসলামের পাসপোর্ট ছয় মাসের জন্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তবে বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট ফেরত চাইলে তাঁকে এখনো আদালতের কাছে আবেদন করতে হচ্ছে, যা অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করছে এবং তাঁর মৌলিক অধিকার চর্চায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

রোজিনা ইসলাম

উদাহরণ হিসেবে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত আগস্টে রোজিনা ইসলামের পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন আদালত। এতে তিনি চলতি মাসে সুইডেনে অনুষ্ঠেয় গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের সম্মেলনে যোগ দিতে পারছেন না।

এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রথম আলোতে কর্মরত রোজিনা ইসলাম বাংলাদেশে করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম তুলে ধরতে গিয়ে নিগ্রহ, নির্যাতন ও মামলার শিকার হয়েছিলেন। সাহসী সাংবাদিকতার জন্য ২০২১ সালে তাঁকে সেরা অদম্য সাংবাদিক (মোস্ট রেজিলিয়েন্ট জার্নালিস্ট) শ্রেণিতে ‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছিল নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক সংস্থা ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড। এ ছাড়া সাংবাদিকতার মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকা রাখার জন্য রোজিনা ইসলামকে ২০২২ সালের ‘অ্যান্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড’ দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
২০২১ সালের ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন রোজিনা ইসলাম। তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিন কারাবন্দী করে রাখা হয়। পরে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে তাঁকে জামিন দেন আদালত।