সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার তাঁর স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে খুনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের তিন লাখ টাকা দিয়েছিলেন। আর তাঁর নির্দেশমতো এই টাকা পাঠান তাঁরই ব্যবসায়িক অংশীদার সায়ফুল হক। গতকাল মঙ্গলবার তৃতীয় অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে এসব তথ্য দেন তিনি।
আদালত সূত্র জানায়, সাক্ষ্যে সায়ফুল হক আদালতকে বলেন, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বাবুল আক্তারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হয়। পরে ঢাকায় প্রিন্টিং ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর ব্যবসার আর্থিক সংকট দেখা দিলে ২০০৯ সালে বাবুল আক্তার তাঁর স্ত্রী মাহমুদা খানমের নামে সেখানে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন মাহমুদা হত্যার তিন দিন পর ঢাকায় তাঁর অফিস সহকারী মোখলেসুর রহমানকে নিয়ে বাবুলের শ্বশুরবাড়িতে যান সমবেদনা জানাতে। ওই সময় বাবুল তাঁর বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত চান। একটি মুঠোফোন নম্বর দিয়ে কোথায় টাকা পাঠাতে হবে, সেটা জেনে নিতে বলেন। তখন নম্বরটি মোখলেসুরকে দেন। ওই নম্বরে টাকা দিয়ে দিতে অফিসের হিসারক্ষককে নির্দেশ দেন। পরে মোখলেসুর রহমানের মাধ্যমে জানতে পারেন তিন লাখ টাকা পরিমাণের অর্থ বিভিন্ন নম্বরে বিকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই সায়ফুল হকের কর্মচারী মোখলেসুর রহমান আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, মাহমুদা হত্যার কয়েক দিন পর সায়ফুলের নির্দেশে মাহমুদা হত্যায় অংশ নেওয়া আসামি মো. ওয়াসিম ও আনোয়ারের বিকাশ নম্বরে তিন লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মো. আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বাবুল আক্তারের ব্যবসায়িক অংশীদার সায়ফুল তাঁর নির্দেশে বাবুলের স্ত্রী খুনে জড়িত ব্যক্তিদের তিন লাখ টাকা বিকাশের মাধ্যমে দেওয়ার কথা আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে বলেছেন। এরপর তাঁকে বাবুলের আইনজীবী জেরা করেন। আদালত বুধবার পর্যন্ত জেরা মুলতবি রাখেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরের পাঁচলাইশ ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানমকে। এ ঘটনায় করা মামলায় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বাবুলসহ সাতজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এতে বলা হয়, অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বাবুল তাঁর স্ত্রীকে সোর্স (তথ্যদাতা) কামরুল শিকদার ওরফে মুসার মাধ্যমে খুন করান। আর এ জন্য তিন লাখ টাকা দেন খুনিদের। যদিও বাবুল তা অস্বীকার করে আসছেন।