চট্টগ্রাম শিশু হাসপাতাল

নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১১ শিশু 

ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

চট্টগ্রামের সেন্ট প্লাসিডস স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সোয়াত সালমানের সারা শরীর ফুলে গেছে। চোখ লাল। আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তিন দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছে সে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এর আগে হাসপাতালটির সাধারণ শয্যায় চার দিন চিকিৎসা নেয় সোয়াত। তার রক্তের প্লাটিলেট ২৫ হাজারে নেমে গিয়েছিল। পরে বৃহস্পতিবার তাকে প্লাটিলেট দেওয়া হয়। এখন আগের চেয়ে কিছুটা ভালোর দিকে।

সালমানের মতো ১০ শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালটির আইসিইউ, সিসিইউ ও এইচডিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার নিবিড় পরিচর্যায় ছিল আটজন। শুধু সংকটাপন্ন নয়, বেড়েছে সাধারণ ডেঙ্গু রোগীও। গতকাল শনিবার ৬৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে মোট ডেঙ্গু রোগী ছিল ৯৭ জন, যা গত বছরের তুলনায় এক দিনে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে শিশু রয়েছে ৫১টি।

হাসপাতালটির পরিচালক মো. নুরুল হক বলেন, গত বছর এক দিনে সর্বোচ্চ ৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী এখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শনিবার (গতকাল) তার চেয়ে ১০ জন বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ১১ শিশু আইসিইউ ব্যবস্থাপনার মধ্যে আছে। বিপরীতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক আইসিইউতে আছেন। শিশুদের কয়েকজনের অবস্থা খারাপ।

এক হাসপাতালে এত বেশিসংখ্যক শিশুর আইসিইউ ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসাধীন থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মিশু তালুকদার বলেন, ৫ থেকে ১২ বছরের শিশুরা ডেঙ্গুতে বেশি কাবু হয়ে পড়ছে। মশা সম্পর্কে সচেতন না থাকা, যেখানে-সেখানে বসে থাকা, মশারি ছাড়া ঘুমানোর কারণে তারা এডিস মশার আক্রমণের শিকার বেশি হয়। আবার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকায় অনেক শিশুর অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে।

সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ফামিয়াকে সাধারণ শয্যা থেকে শুক্রবার আইসিইউতে নেওয়া হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার তাকে ভর্তি করা হয়। ফামিয়ার মা মুন্নী আকতার জানান, তাঁর স্বামী, শাশুড়ি, বড় মেয়েরও জ্বর ছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে ফামিয়া বেশি কাহিল হয়ে পড়েছে।

সহকারী অধ্যাপক মিশু তালুকদার বলেন, ১১ শিশুর মধ্যে আইসিইউতে ৫ জন, ৩ জন সিসিইউ ও ৩ জন এইচডিইউতে রয়েছে। সবাই আইসিইউ ব্যবস্থাপনা পাচ্ছে। দু-একজন রক্তবমিও করছে বলে জানান তিনি। ফামিয়া ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে ভুগছে। তার রক্তচাপ কমে গেছে। এটা স্থিতিশীল রাখার জন্য স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে, যাতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৫ থেকে ১২ বছরের শিশুরা ডেঙ্গুতে বেশি কাবু হয়ে পড়ছে। মশা সম্পর্কে সচেতন না থাকা, যেখানে-সেখানে বসে থাকা, মশারি ছাড়া ঘুমানোর কারণে তারা এডিস মশার আক্রমণের শিকার বেশি হয়।
মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মিশু তালুকদার

পাশের শয্যায় থাকা জারা (৫) নামের ছোট মেয়েটির এক সপ্তাহ ধরে জ্বর কমছে না। বমির সঙ্গে রক্তও যাচ্ছে। কিছু খেতেও পারছে না। বিছানার সঙ্গে লেপ্টে গেছে শরীর। মা টুম্পা আকতার মেয়ের অবস্থা দেখে দিশাহারা।

তবে একটু সুস্থতার দিকে এনায়েত বাজারের আদিত্য দাশ। ১৭ জুলাই ভর্তি হওয়া দ্বিতীয় শ্রেণির এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে গতকাল দুপুরে দেখা করতে এসেছিল তার বড় ভাই অপূর্ব দাশ। আইসিইউতে অপূর্বকে দেখে আদিত্যের মুখে কিছুটা হাসি ফোটে। মা প্রিয়াঙ্কা দাশকেও আগের চেয়ে কিছুটা চিন্তামুক্ত দেখাল।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় গতকাল নতুন করে ১৪৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ে মারা গেছেন ১ জন। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ১০ জনই শিশু।

তবে ছেলের ভাবনায় এখনো অস্থির আগ্রাবাদের নাসিমা আকতার। তাঁর ছেলে রবিউল হাসান ওরফে আজমাইন (৬) হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। ১৭ জুলাই হাসপাতালে আসে সে। তার রক্তচাপ কমে গেছে। ডেঙ্গুর পাশাপাশি টাইফয়েডও পাওয়া গেছে তার। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে আজমাইন সবার ছোট। আদর-যত্নের কমতি নেই। মা নাসিমা আকতার সার্বক্ষণিক শয্যাপাশে বসে আছেন। নাসিমা ছেলের হাত ধরে রেখেছেন। আর বলছেন, ‘আপনারা আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।’

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় গতকাল নতুন করে ১৪৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ে মারা গেছেন ১ জন। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ১০ জনই শিশু। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৯২৩ জন। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ শিশু। বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ভর্তি রয়েছেন ২৩৯ জন।