মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

ফখরুল-খসরুসহ ১৮ নেতা ৩ থেকে ১২ মাস কারাগারে

মির্জা ফখরুল ১১টির মধ্যে ১০ মামলায় জামিন পেয়েছেন। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় জামিন নামঞ্জুর হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে গত ২৮ অক্টোবর এবং এর পরের সংঘর্ষ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে ১১টি মামলা হয়। এর মধ্যে ১০টিতে তিনি জামিন পেয়েছেন। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় তাঁর জামিন হয়নি।

ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পরদিন মির্জা ফখরুলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সেই থেকে তিন মাসের বেশি সময় ধরে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

মির্জা ফখরুলের মতো কারাগারে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও শামসুজ্জামান (দুদু), চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার ও সৈয়দ এমরান সালেহ (প্রিন্স), মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক জহির উদ্দিন স্বপন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরীসহ (এ্যানি) ১৮ জন শীর্ষস্থানীয় নেতা।

রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিন মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকা বিএনপির মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন নেতা শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি আশা করেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে সব মামলায় জামিন দিয়ে বিএনপির নেতাদের মুক্তি দেওয়া হবে।
কায়সার কামাল, জামিন ও সাজার বিষয়ে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক

এঁদের মধ্যে ১১ জন গত ২৮ অক্টোবরের পরে গ্রেপ্তার হন। বাকিদের কেউ ছয় মাস, কেউ এক বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন।

দেশে গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিএনপির অন্তত দুজন কেন্দ্রীয় নেতা এবং তৃণমূল ও জেলা পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। জামিনে মুক্তি পাওয়া নেতাদের তালিকায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ ও তাঁর ছেলে তানভীর আহমেদ এবং যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবীরা।

কিছু কিছু মামলায় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারাও জামিন পেয়েছেন। তবে সব মামলায় জামিন না হওয়ায় তাঁরা মুক্তি পাননি।

আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র ও বিএনপি নেতাদের আইনজীবীরা জানান, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা থানার মামলায় মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদন নাকচ হয়েছে নিম্ন ও উচ্চ আদালতে। গত ২ নভেম্বর গ্রেপ্তার হওয়া আমীর খসরুও একই মামলায় জামিন পাননি। তিনি অন্য নয়টি মামলায় জামিন পেয়েছেন।

মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরুর আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের হামলার মামলায় ইতিমধ্যে ১০ জনের বেশি আসামি জামিন পেয়েছেন। মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরুর জামিন নামঞ্জুর হয়েছে। তিনি বলেন, আবার তাঁদের জামিন চেয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করা হবে।

মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ২৮ অক্টোবর এবং তার পরের ঘটনাবলিকে কেন্দ্র করে মামলা হয়েছে ১১টি। গতকাল সোমবার তিনি সিএমএম আদালত থেকে ৬টি মামলায় জামিন পান। তিনি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ সদস্য হত্যা মামলাসহ ৫টি মামলায় জামিন পাননি। তিনি গ্রেপ্তার হন গত ৩১ অক্টোবর।

আলতাফ হোসেন চৌধুরী গ্রেপ্তার হন গত ৫ নভেম্বর। ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় দায়ের করা রমনা থানার চারটি মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়। এখন পর্যন্ত কোনো মামলায় তিনি জামিন পাননি। পুরোনো একটি মামলায় গত ২৮ ডিসেম্বর তাঁর ২১ মাসের কারাদণ্ডও হয়েছে।

সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রেপ্তার হন গত ২ নভেম্বর। নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় ছয় মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়। কোনো মামলায় তিনি জামিন পাননি। তাঁরও পুরোনো একটি মামলায় গত ৩১ ডিসেম্বর তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।

আলতাফ হোসেন ও মোয়াজ্জেম হোসেনের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নতুন করে আবেদন করা হবে। তাঁদের সাজার রায় বাতিল চেয়ে আপিলও করা হয়েছে।

শামসুজ্জামান (দুদু) গত ৫ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন। গত ২৮ অক্টোবরের পর তাঁর বিরুদ্ধে ১০টি মামলা হয়েছে। কোনো মামলায় তিনি জামিন পাননি। মজিবর রহমান সরোয়ার গ্রেপ্তার হন গত ২ নভেম্বর। এরপর থেকে তিনি কারাগারে। জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে নতুন করে সাতটি মামলা হয়েছে। তিনি গতকাল ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে দুটি মামলায় জামিন পেয়েছেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা হয়েছে গত ২৮ অক্টোবরের পর। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় গত ২ নভেম্বর। তিনি কোনো মামলায় জামিন পাননি।

শহীদ উদ্দীন চৌধুরী গ্রেপ্তার হন গত বছরের ১০ অক্টোবর। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। তিনি কোনো মামলায় জামিন পাননি।

কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, হাবীবুর রহমান হাবীব, নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম (মজনু), যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম (নীরব) ও ঢাকা মহানগর যুবদলের (উত্তর) আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর। এর মধ্যে সাইফুল আলম গত বছরের ৪ মার্চ গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে কারাগারে রয়েছেন। পুরোনো সাতটি মামলায় তাঁর সাজা হয়েছে। শেখ রবিউল আলম কারাগারে রয়েছেন এক বছরের বেশি সময় ধরে।

ঢাকার আদালতে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণের পর থেকে কারাগারে রয়েছেন বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান। দুর্নীতির মামলায় ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আমানের জামিন হয়নি।

সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক তাঁরা

বিএনপি এবং দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের অনেকের সাজা হয়েছে। তাঁরা পলাতক। এ তালিকায় রয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, যুবদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনামুল হক, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া, রাজীব আহসান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ ও আকরামুল হাসান।

জামিন ও সাজার বিষয়ে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিন মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকা বিএনপির মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন নেতা শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি আশা করেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে সব মামলায় জামিন দিয়ে বিএনপির নেতাদের মুক্তি দেওয়া হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার সময় গত ২৮ অক্টোবরের পর শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা হয়েছিল। তিনি কারাগারে ছিলেন। গত ২৯ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি পরদিন আওয়ামী লীগে যোগ দেন। মনোনয়ন পেয়ে ভোটে অংশ নেন। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।