সড়ক দুর্ঘটনা দেশের অন্যতম জাতীয় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, গত ১৫ দিনে যেসব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার বেশির ভাগই ঘটেছে ত্রুটিপূর্ণ (ফিটনেসবিহীন) যানবাহনের কারণে। সড়ক পরিবহন আইন সংসদে পাসের অপেক্ষায় আছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই আইনের আওতা বাড়ানো হয়েছে।
নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) দশম মহাসমাবেশের আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করে নিসচা।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি সড়ক দুর্ঘটনার বেশ কিছু কারণের কথা তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে যাত্রী ও পথচারীদের অসচেতনতা, চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব, চলন্ত অবস্থায় চালকের মুঠোফোনে কথা বলা, অপরিকল্পিত ভঙ্গুর সড়ক, ওভারব্রিজের স্বল্পতা ও ট্রাফিক আইন না মানা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় যেসব কারণ সরকারের চোখে ধরা পড়ছে, তা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনা রোধে সরকারের কোথায় দুর্বলতা আছে, তা নিসচার মতো সংগঠনকে সুপারিশ আকারে জানানোর জন্য বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন আইন সংসদে পাসের অপেক্ষায় আছে। আইনে চালক, চালকের সহকারী, মালিক ও বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি—সবার দায়ই যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কে কোন দায়িত্বে থাকবেন, তাঁর গাফিলতির জন্য কীভাবে শাস্তি ভোগ করবেন, সবকিছুই এখানে পরিষ্কারভাবে করা হয়েছে। আইনের আওতা বাড়ানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘পৃথিবীতে কোনো সড়ক নেই, যেখানে দুর্ঘটনা হয় না। আরও বড় দুর্ঘটনা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে যেটা হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণের ভেতরে।’
অল্প দূরত্বে যেতেও অনেকে পুরো পরিবার নিয়ে মোটরসাইকেলে ওঠেন উল্লেখ করে আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, এই গাড়ি খুব ঝুঁকিপূর্ণ। ঈদের সময় অপ্রাপ্তবয়স্কদের হাতে মোটরসাইকেল না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সচিব বলেন, ‘আমরা বিআরটিসি বাস চালু করেছিলাম। যখন হাত ওঠাবে তখন থামবে। মানুষ বাসে উঠছে না। আবার সেই থ্রি হুইলার, আবার সেই রিকশা। তো প্রতি ইঞ্চি জায়গা পুলিশ পাহারা দেবে না। যখন পুলিশ সরবে, আবার সে রাস্তায় উঠবে।’
মহাসমাবেশের এই আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন নিসচার চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। নিসচার কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যে ধরনের কাজ করছেন, তাতে সুফল আসছে কি না, তা ভেবে দেখবেন। যদি সফলতা না আসে তাহলে আবার ভাববেন। কাজটাকে কীভাবে করলে কাজের সফলতা বেশি হবে।’
অনুষ্ঠানে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন মহাসমাবেশ উদ্যাপন কমিটির সদস্যসচিব কাইয়ুম খান। এ সময় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় নিসচার কিছু শাখাকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।
নিসচার মহাসচিব এস এম আজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন মো. গনি মিয়া। এ সময় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন ইলিয়াস কাঞ্চনের কানাডাপ্রবাসী ছেলে ও নিসচার আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মিরাজুল মইন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আমেরিকান ওয়েলনেস সেন্টারের অ্যাডভাইজার, কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স মোহাম্মদ ইমতিয়াজ, ভিসতার ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান হোসেন প্রমুখ।