পার্বত্য তিন জেলা

বিচারাধীন দেওয়ানি আপিল নিষ্পত্তি করবেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০’ অনুযায়ী পাহাড়ি জাতিসত্তার মানুষের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের স্বীকৃতি রয়েছে। এই বিধির আওতায় তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকেরা দেওয়ানি–সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারতেন। তাঁদের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার বা ক্ষেত্রবিশেষে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল (আবেদন) করা যেত।

তবে ২০০৩ সালে আইন সংশোধনের (২০০৮ সালে কার্যকর হয়) পর বিভাগীয় কমিশনার বা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের কাছে বিচারাধীন দেওয়ানি আপিল বা অন্য কোনো আইনি কার্যধারা সংশ্লিষ্ট জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে স্থানান্তরিত হতে পারে কি—এটিসহ দুটি প্রশ্নে আসা রেফারেন্সের ওপর আজ সোমবার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ এ রায় দেন।

রায়ে আদালত চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার বা ক্ষেত্রবিশেষ অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের কাছে বিচারাধীন দেওয়ানি আপিল বা অন্য কোনো আইনি কার্যধারা সংশ্লিষ্ট জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে স্থানান্তরিত হতে পারে না বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। স্থানান্তরিত হওয়া অনিষ্পন্ন যেসব দেওয়ানি আপিল বা অন্য কোনো আইনি কার্যধারা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি, সেগুলো অবিলম্বে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠাতে রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির জেলা জজদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, যেসব দেওয়ানি আপিল মামলা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট তিন জেলার জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজ নিষ্পত্তি করেছেন, সেগুলো অতীত বিবেচনায় নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বলে গণ্য হবে। যে কারণে এমন ক্ষেত্রে জেলা জজ ও অতিরিক্ত জেলা জজের এখতিয়ারের প্রশ্ন চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।

১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিতে ২০০৩ সালে সংশোধনী আনা হয়, যা ২০০৮ সালের ১ জুলাই কার্যকর হয়। সংশোধনীর বিধান অনুসারে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের কাছে নিষ্পন্নাধীন সব ফৌজদারি আপিলসহ অন্যান্য ফৌজদারি প্রকৃতির মামলাগুলো সংশ্লিষ্ট জেলার দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তরিত হবে। তবে জেলা জজ আদালত প্রতিষ্ঠার আগে (২০০৮ সালে) দেওয়ানি প্রকৃতির মামলায় জেলা প্রশাসকের দেওয়া রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার বা ক্ষেত্রবিশেষ অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের কাছে করা বিচারাধীন দেওয়ানি আপিল স্থানান্তর বিষয়ে সংশোধনীতে পরিষ্কার করে বলা নেই।

এমন প্রেক্ষাপটে একটি দেওয়ানি আপিল মামলা বান্দরবান পার্বত্য জেলার অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে ওঠে। এ অবস্থায় সংশোধনী কার্যকরের আগে অনিষ্পন্ন দেওয়ানি আপিল মামলা সংশ্লিষ্ট জেলা জজ আদালতে স্থানান্তর হতে পারে কি না এবং বিভাগীয় কমিশনার বা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তা সংশ্লিষ্ট জেলা জজ আদালতে পাঠালে (শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য) ও আদালত তা নিষ্পত্তি করলে আইনসিদ্ধ হবে কি না—এই দুই প্রশ্নে রেফারেন্স (মতামত বা নির্দেশনা চেয়ে) পাঠানো হয়। দেওয়ানি কার্যবিধির ১১৩ ধারার বিধান অনুসারে এই রেফারেন্স পাঠানো হয়। আর বান্দরবান পার্বত্য জেলা জজের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবরে ওই রেফারেন্স পাঠান বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা জজ।

এরপর প্রধান বিচারপতি ওই রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টের ওই বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দেন। আদালত আইনি মতামত দিতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতে আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনসহ পাঁচজন আইনজীবীকে মনোনীত করেন। তাঁদের মধ্যে চারজন ১৪ নভেম্বর আইনি মতামত দেন। সেদিন শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আইনে বিচারাধীন দেওয়ানি আপিল মামলা স্থানান্তরের বিধান নেই। তাই চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার বা ক্ষেত্রবিশেষে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের কাছে বিচারাধীন দেওয়ানি আপিল, রিভিশন বা অন্য কোনো আইনি কার্যধারা সংশ্লিষ্ট জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে স্থানান্তরিত হওয়ার সুযোগ নেই। একই ধরনের অভিমত দেন অপর দুই অ্যামিকাস কিউরি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও দেবাশীষ রায় (চাকমা সার্কেল প্রধান)। তবে সেদিন ভিন্নমত পোষণ করেন অপর অ্যামিকাস কিউরি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ পৃথক করার পর বিচারিক কার্যক্রম অন্য কোনো ফোরাম পরিচালনা করতে পারে না। শুনানি নিয়ে ১৪ নভেম্বর আদালত রায়ের জন্য ২১ নভেম্বর দিন রাখেন। এ অনুসারে আজ রায় দেওয়া হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।