ট্রাকের নিচে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া প্রাইভেট কার। গতকাল বেলা দেড়টায় ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায়। (চাপা পড়া কারের ভেতরে থাকা মরদেহগুলোর ছবি অস্পষ্ট করে দেওয়া হলো)
ট্রাকের নিচে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া প্রাইভেট কার। গতকাল বেলা দেড়টায় ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায়। (চাপা পড়া কারের ভেতরে থাকা মরদেহগুলোর ছবি অস্পষ্ট করে দেওয়া হলো)

সড়কে চলছে ছয় লাখ অবৈধ যান

বিপুল অর্থ ব্যয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা কম। ফলে দুর্ঘটনা কমছে না। 

২০১২ সালের পর ১১ বছরে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছে। সড়ক সম্প্রসারণ, নতুন নতুন সেতু ও টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সড়কে দুর্ঘটনা কমছে না, বরং মৃত্যু বাড়ছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল ব্যয় হলেও যানবাহনের ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স নিশ্চিত করা, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো ও শ্রমিকদের মাদক গ্রহণ বন্ধ করা, নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করা, সড়কের ত্রুটি দূর করা, অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করা—এসব নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে দুর্ঘটনা কমেনি। সারা দেশের সড়কে এখন ছয় লাখের বেশি যানবাহন চলছে অবৈধভাবে, যাদের হালনাগাদ ফিটনেস সনদ নেই। 

সড়কে শৃঙ্খলা না থাকার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে পরপর দুদিন দুটি বড় দুর্ঘটনার পর। গতকাল বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় একটি দ্রুতগতির ট্রাক তিনটি ইজিবাইক, একটি গাড়ি (প্রাইভেট কার) ও একটি ছোট ট্রাককে ধাক্কা ও চাপা দিলে ১৪ জন মারা যান। অথচ ইজিবাইক মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ। 

সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার এবং বেশি সংখ্যায় প্রাণহানির মতো অবস্থা সড়কে বিদ্যমান। দুর্ঘটনা কমানো ও প্রাণহানি ঠেকাতে সরকারের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সে অনুযায়ী কোনো কর্মসূচি নেই। এমনি এমনি প্রাণহানি কমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। 
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক সামছুল হক

এর এক দিন আগেই ফরিদপুরে বাস ও যাত্রীবাহী ট্রাকের সংঘর্ষে ১৫ জন মারা যান। দুর্ঘটনায় পড়া বাসটির রুট পারমিট (নির্দিষ্ট পথে চলাচলের অনুমোদন), হালনাগাদ ফিটনেস সনদ ও ট্যাক্স টোকেন (কর পরিশোধের সনদ) কিছুই ঠিক ছিল না। মারা যাওয়া ব্যক্তিরা ছিলেন ছোট ট্রাকের যাত্রী। যদিও আইনে ট্রাকে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার এবং বেশি সংখ্যায় প্রাণহানির মতো অবস্থা সড়কে বিদ্যমান। দুর্ঘটনা কমানো ও প্রাণহানি ঠেকাতে সরকারের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সে অনুযায়ী কোনো কর্মসূচি নেই। এমনি এমনি প্রাণহানি কমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। 

২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। ‘শিক্ষার্থীরা চোখ খুলে দিয়েছে’—নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ এমন কথাও বলেছিলেন। কিন্তু এরপরও বদলায়নি তেমন কিছু। আন্দোলনের চাপে তড়িঘড়ি সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন করে সরকার। কিন্তু এখনো আইনের কাটাছেঁড়া চলছে। আইনটিতে শাস্তির ধারা শিথিল করে সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত এক যুগে দূরপাল্লার পথে কিছু আধুনিক বাস নেমেছে। কিন্তু বেশির ভাগ গণমানুষের বাস এখনো লক্কড়ঝক্কড়। ট্রাকের অবস্থা আরও খারাপ। 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে সারা দেশে যানবাহন আছে ৬০ লাখের মতো। এর মধ্যে ৪৪ লাখের মতো মোটরসাইকেল, যার কোনো ফিটনেস সনদ দরকার হয় না। বাকি যে ১৬ লাখ যানবাহন রয়েছে, তার মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজারের মতো যানের ফিটনেস সনদ হালনাগাদ নেই। অর্থাৎ ফিটনেস সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক যানবাহনের মধ্যে প্রায় ৩৯ শতাংশ এই সনদ ছাড়াই অবৈধভাবে চলাচল করছে। 

এর প্রভাব সড়কে স্পষ্ট। বেসরকারি হিসাবের চেয়ে সরকারি হিসাবে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কম। এরপরও সরকারি ও বেসরকারি—দুই হিসাবেই সড়কে প্রাণহানি প্রতিবছরই বাড়ছে। বিআরটিএর হিসাবে, ২০১৯ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৪ হাজার ১৩৮ জন। গত বছর (২০২৩) তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৪ জনে। 

বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয় ৫ হাজার ২১১ জনের। গত বছর প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫২৪ জনে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী প্রথম আলোকে বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা আনতে তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। কারণ, পরিবহন খাতে সরকারের অর্জন অনেক। সড়কে প্রাণহানি বদনাম সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে থেকে সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখতে গতকাল নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

গত এক যুগে দূরপাল্লার পথে কিছু আধুনিক বাস নেমেছে। কিন্তু বেশির ভাগ গণমানুষের বাস এখনো লক্কড়ঝক্কড়। ট্রাকের অবস্থা আরও খারাপ। 

সিদ্ধান্ত হয়, বাস্তবায়ন কম

দেশে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার নীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের শীর্ষ ফোরাম জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনআরএসসি)। এর সভাপতি পদাধিকারবলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি রয়েছেন। ছয় মাস অন্তর বৈঠক করে নতুন নীতি প্রণয়ন ও আগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করার কথা তাঁদের। কিন্তু এই কাউন্সিলের নেওয়া বেশির ভাগ সিদ্ধান্তই বাস্তবায়িত হয় না।

পুলিশ, রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ও যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনাসংক্রান্ত গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যায় ওপরের দিকে থাকছে মোটরসাইকেল এবং নছিমন, করিমন, অটোরিকশার মতো তিন চাকার যানবাহন।

সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে এনআরএসসি ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে ২২টি জাতীয় মহাসড়কে নছিমন, করিমন, থ্রি-হুইলার, অটোরিকশা, অটোটেম্পো ও সব অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় বিআরটিএ, জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ। কিন্তু সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হয়নি। 

পুলিশ, রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ও যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনাসংক্রান্ত গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যায় ওপরের দিকে থাকছে মোটরসাইকেল এবং নছিমন, করিমন, অটোরিকশার মতো তিন চাকার যানবাহন।

সারা দেশে সড়ক ও মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নছিমন-করিমন চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ২০১১ সালে। সর্বশেষ গত বছর জুলাইয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তিন চাকার যান তুলে দেওয়ার বিষয়টি ওঠে। জবাবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংসদ নির্বাচনের আগে মহাসড়কে ভটভটি, নছিমন ও করিমনের মতো দুর্ঘটনাপ্রবণ যান চলাচল বন্ধের দিকে যাবে না সরকার। আবারও ক্ষমতায় এলে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এটি বৈঠকের কার্যবিবরণীতেও রয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে। এখন ছোট যান মহাসড়কে চলাচল বন্ধ হবে কি না, জানতে চাইলে সড়কসচিব আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘আমাকে এক মাস সময় দেন। একটা নীতিমালা হয়ে যাচ্ছে। এরপর বড় অভিযান হবে।’ 

অঙ্গীকার পূরণ হয়নি

সারা বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে জাতিসংঘ ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এক দশককে নিরাপদ সড়ক দশক ঘোষণা করেছিল। বাংলাদেশ এই কর্মসূচিতে অনুস্বাক্ষর করে। কিন্তু দুর্ঘটনা কিংবা প্রাণহানি কমাতে পারেনি। বরং বেড়েছে। এরপর জাতিসংঘ ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। কিন্তু এখনো কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ।

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত অর্ধেকে নামিয়ে আনতে ২০০৮ সাল থেকে তিন বছর মেয়াদি কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে আসছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ২০০৮-২০১০, ২০১১-২০১৩, ২০১৪-২০১৬ ও ২০১৭-২০২০ কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর কী সফলতা, তা মূল্যায়ন করেনি সরকার। ফলে এসব কর্মপরিকল্পনা কাগজেই রয়ে গেছে।

আমাকে এক মাস সময় দেন। একটা নীতিমালা হয়ে যাচ্ছে। এরপর বড় অভিযান হবে।
সড়কসচিব আমিন উল্লাহ নুরী

সড়ক নিরাপদ করতে সর্বশেষ কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা ২০২১-২০২৪ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগের নানা উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ, বিআরটিএ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বই সবচেয়ে বেশি। 

সরকার অবশ্য নানা কাজ করছে। যেমন দূরপাল্লার চালকদের ক্লান্তি দূর করতে মহাসড়কের পাশে কিছু বিশ্রামাগার নির্মাণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। এরপর সওজ কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ এবং মাগুরায় পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য চারটি আধুনিক সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগার স্থাপনের প্রকল্প নেয়। এখনো সেগুলো চালু হয়নি। এ ছাড়া সারা দেশে ১৭২টি স্থানে (ব্ল্যাক স্পট) সড়কের বাঁক সোজা করা হয়েছে; কিন্তু দুর্ঘটনা কমছে না। 

নতুন প্রকল্প

২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাংক ৩৫ দশমিক ৭ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা) ঋণ দিচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৩০ শতাংশ কমবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। গত বছরের জুনে প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয়। তবে এখনো মাঠপর্যায়ে কাজ এখনো শুরু হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর, পুলিশ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিআরটিএসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। প্রকল্পের জন্য দুটি মহাসড়ক বেছে নেওয়া হয়েছে—গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা এবং নাটোর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত।

প্রকল্পের আওতায় মহাসড়কের সংকেত (সাইন) ঠিক করা, আশপাশের হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্ঘটনায় আহত মানুষের দ্রুত চিকিৎসার লক্ষ্যে বিনা পয়সায় অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া, পেশাদার চালকের প্রশিক্ষণ, দুর্ঘটনার তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশকে যন্ত্রপাতি দেওয়া, হাইওয়ে পুলিশের জন্য মাদারীপুরে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। 

সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু মানুষই মরছে না, অনেকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন। অনেক পরিবার উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে আর্থিক দুর্দশায় পড়ছে। 

দুর্ঘটনায় হতাহতের বড় অংশই কর্মক্ষম ব্যক্তি। এর প্রভাব ভুক্তভোগীর পরিবার ছাড়াও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের নীতিনির্ধারকদের বদ্ধমূল ধারণা যে রাস্তা বড় আর মসৃণ করলেই সড়ক দুর্ঘটনা কমে যাবে, এটা ভুল। সড়কে নৈরাজ্য রেখে রাস্তা বানালে কোনো লাভ হবে না।
বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ২০১৭ সালে প্রকাশ করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় একজন কর্মক্ষম ব্যক্তির প্রাণ হারানোর কারণে ২৪ লাখ ৬২ হাজার ১০৬ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। তবে এর সঙ্গে দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির পরিবারের অন্যদের অর্থনৈতিক চাপ, কর্মক্ষেত্রের ক্ষতিসহ অন্যান্য বিষয় আমলে নেওয়া হয়নি। 

বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান দুর্ঘটনায় বার্ষিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরি করেন। তাঁর হিসাবে, সরকার হতাহতের যে হিসাব দেয়, তাতে ২০২১ সালে দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৮ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। 

হাদীউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনায় হতাহতের বড় অংশই কর্মক্ষম ব্যক্তি। এর প্রভাব ভুক্তভোগীর পরিবার ছাড়াও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের নীতিনির্ধারকদের বদ্ধমূল ধারণা যে রাস্তা বড় আর মসৃণ করলেই সড়ক দুর্ঘটনা কমে যাবে, এটা ভুল। সড়কে নৈরাজ্য রেখে রাস্তা বানালে কোনো লাভ হবে না।