শেরপুর জেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ কোনো দিন স্কুলেই যায়নি। এ ছাড়া এ জনগোষ্ঠীর ৪৮ শতাংশ মানুষের স্থায়ী কোনো কাজ নেই। বাকি যারা স্থায়ী কাজ করেন তাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই কৃষিজীবী।
‘শেরপুর জেলায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীদের আর্থসামাজিক অবস্থা’ নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ প্রতিবেদন এ তথ্য ওঠে এসেছে। আজ সোমবার সকালে ব্যুরোর সেমিনার কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব মো. মাহবুব হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মফিদুর রহমান, সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। জরিপ নিয়ে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এ প্রকল্পের পরিচালক ও ব্যুরোর উপপরিচালক ফারহানা সুলতানা। শেরপুরের জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাফিজা জেসমিন বক্তব্য দেন।
মূল প্রতিবেদনে ফারহানা সুলতানা জানান, শেরপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার গত বছর জেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রকৃত অবস্থা জানতে তাদের নিয়ে একটি জরিপ করার জন্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ জরিপ প্রকল্প করা হয়েছে। একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই প্রথম কোনো জেলায় এ ধরনের জরিপ করা হয়েছে। ৯ মাসের মধ্যে এ জরিপ করা হয়েছে।
শেরপুর জেলায় সদর, ঝিনাইগাতী, নকলা, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী—এই পাঁচটি উপজেলা। মোট জনসংখ্যা ১৫ লাখ ১ হাজার ৮৫৩ জন। এর মধ্যে জরিপে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা ২০ হাজার ৮৪০। এখানে গারো, কোচ, বর্মণ, হাজং, ডালু, হুদি, মসুর, মার্মা, ম্রো, চাক, মাহালীসহ প্রায় ১৬টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। জনসংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি গারো, এরপর রয়েছে বর্মণ, কোচ, হুদি ও হাজং। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা নালিতাবাড়ীতে সবচেয়ে বেশি। তাদের সংখ্যা ৮ হাজার ১১১। এরপর রয়েছে ঝিনাইগাতীতে (৬ হাজার ৯৩৮ জন), শ্রীবরদীতে (৩ হাজার ৪৭৬ জন), সদরে (১ হাজার ৫৩১ জন) এবং নকলায় সবচেয়ে কম—৭৮৪ জন। এসব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে পুরুষপ্রধান পরিবারের সংখ্যা ৭৩ দশমিক ২৭ এবং নারীপ্রধান পরিবার ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
শেরপুরের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে প্রাথমিক স্কুলগামী মানুষের সংখ্যা মাত্র ২০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। শিক্ষায় হাজংরা সবচেয়ে এগিয়ে। তাদের মধ্যে শিক্ষার হার ৭৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। এরপর গারোদের শিক্ষার হার ৬৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। আর জেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ উচ্চশিক্ষা (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) পর্যায়ে অধ্যয়ন করছে।
শেরপুরের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৯২ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ নিজের বাড়িতে বসবাস করেন। ভাড়া বাড়িতে থাকেন মাত্র ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তাদের মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ জাতীয় গ্রিডের আওতায় বিদ্যুৎ–সংযোগ সুবিধা পান। অন্যরা সোলার বা অন্য উৎস ব্যবহার করেন। নিরাপদ সুপেয় পানির আওতায় রয়েছে ৯৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ মানুষ। উন্নত শৌচাগার ব্যবহার করেন ৮৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে কর্মসংস্থান আছে ৫১ দশমিক ৮৪ শতাংশের।
আলোচনায় প্রধান অতিথি মো. মাহবুব হোসেন বলেন, এই জরিপ থেকে জেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অবস্থা সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল। এই জরিপকে পাইলট প্রকল্প হিসেব ধরে পরে সারা দেশের জেলাগুলোতে এমন জরিপ করা যেতে পারে।
বিশেষ অতিথি মো. মফিদুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, সমাজের অনেক বিষয় আছে, যা পরিসংখ্যানের মধ্য দিয়ে তুলে আনা হলে প্রকৃত অবস্থা জানা যায়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন জেলায় সাংস্কৃতিক জরিপের পরিকল্পনা করেছে বলে তিনি জানান।
সভাপতি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, দেশের তিন পার্বত্য জেলায় এমন জরিপ করার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। এর প্রক্রিয়া চলছে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপপরিচালক আশিকা শারমিন।