আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয় মুসাকে
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে  এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয় মুসাকে

ভালোবাসায় সিক্ত সেই গুলিবিদ্ধ শিশু মুসাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মাথায় গুলিবিদ্ধ শিশু বাসিত খান মুসাকে (৭) উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়েছে। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে মুসার চিকিৎসা হবে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়।

মুসাকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহায়তা করেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই। সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রবাসী বাংলাদেশি ও দেশের সাধারণ মানুষ মুসার চিকিৎসায় অর্থসহায়তা দিয়ে পাশে থেকেছেন।

আপনারা যার যার জায়গা থেকে সহায়তা করেছেন। আপনাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। আপনারা দোয়া করবেন যেন মুসার মুখে আবার মা ডাক শুনতে পারি।
মুসার মা নিশামনি
সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে মুসার চিকিৎসা হবে।

তিন মাসের বেশি সময় ধরে সংকটাপন্ন মুসাকে দেশে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকা মুসা বারবার সংক্রমণের সম্মুখীন হয়। শরীর অ্যান্টিবায়োটিক–প্রতিরোধী হয়ে যাওয়ার পর দেশে আর চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে জানান চিকিৎসকেরা। তাঁরা সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সুপারিশ করেন। তবে এত বিপুলসংখ্যক অর্থসহায়তা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দেয়।

মুসা ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ও পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো। সর্বশেষ ৭ অক্টোবর ‘আন্দোলনকালে গুলিবিদ্ধ শিশু মুসাকে সিঙ্গাপুরে নিতে বলছেন চিকিৎসকেরা, কে দেবে এত টাকা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এই সংবাদ প্রকাশের পর চ্যানেল আই মুসাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর জন্য বিনা মূল্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দেয়। সরকার, প্রবাসী ও দেশবাসীও সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়ায়।

প্রথম আলোতে প্রকাশিত শিশুটির সংবাদ পড়ে মনে হয়েছে ওর পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। সরকার চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহায়তা দিয়েছি।
চ্যানেল আইয়ের পরিচালক জহিরউদ্দিন মামুন
রাজধানীর রামপুরার মেরাদিয়া হাট এলাকার বাসার নিচে গত ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয় সাত বছর বয়সী শিশু বাসিত খান মুসা। শিশুটি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল

চ্যানেল আইয়ের পরিচালক জহিরউদ্দিন মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম আলোতে প্রকাশিত শিশুটির সংবাদ পড়ে মনে হয়েছে ওর পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। সরকার চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহায়তা দিয়েছি।’

মুস্তাফিজুর রহমান ও নিশামনি দম্পতির একমাত্র সন্তান বাসিত খান মুসা। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় মেরাদিয়া হাট এলাকায় নিজ বাসার নিচে মুসাকে আইসক্রিম কিনে দিতে নেমে দাদি মায়া ইসলাম (৬০) ও মুসা গুলিবিদ্ধ হয়। মায়া ইসলাম পরদিন মারা যান। আর মাথায় বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় মুসাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সংকটাপন্ন মুসাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সিএমএইচের নিউরোসার্জন বিভাগে (প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য) স্থানান্তর করা হয় গত ২৬ আগস্ট। আর গত ৪ সেপ্টেম্বর তাকে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালের শিশু নিউরোলজি বিভাগে। সিএমএইচে মুসা মূলত জ্যেষ্ঠ নিউরোসার্জন অধ্যাপক কর্নেল মো. আল আমিন সালেক এবং পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁরা মুসাকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর জন্য সুপারিশ করেন।

মুসাকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহায়তা করেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই। সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রবাসী বাংলাদেশি ও দেশের সাধারণ মানুষ মুসার চিকিৎসায় অর্থসহায়তা দিয়ে পাশে থেকেছেন।

অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সিএমএইচ থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে শিশু মুসাকে নিয়ে রওনা হয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকের যে দলটি মুসার চিকিৎসা করবে, তাঁদের একজন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে এসেছেন। তাঁকে মুসার চিকিৎসার সব কাগজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় আনুমানিক ৫০ দিনের জন্য চিকিৎসা হবে। মুসার সুস্থ হয়ে ওঠার বিষয়ে আমরা খুবই আশাবাদী।’ তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকেরা মুসার বিষয়ে খুবই আগ্রহী। তাঁরা এ পর্যন্ত মুসা কী কী চিকিৎসা পেয়েছে, তার খুঁটিনাটি জেনে নিয়েছেন। সময়ে–সময়ে মুসার চিকিৎসার বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের চিকিৎসক ও সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়েছে।’

মুসার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন মুসার মা নিশামনি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তানকে নিয়ে কঠিন সময় পার করছি। এ অবস্থায় আমার সন্তানের প্রতি সরকার, সমাজ যে ভালোবাসা দেখিয়েছে, আর্থিক ও মানসিক সহায়তার হাত বাড়িয়েছে, তার জন্য আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কোনো ভাষা নেই। শুরুতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ও নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ও নার্স এবং পরে সিএমএইচের চিকিৎসক ও নার্সরা মুসাকে চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন। মুসাকে নিয়ে প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশের পর মুসার কথা মানুষ জানতে পেরেছে। চ্যানেল আই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহায়তা করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা যার যার জায়গা থেকে সহায়তা করেছেন। আপনাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। এবার প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা হবে। ধাপে ধাপে দীর্ঘ মেয়াদের চিকিৎসার মাধ্যমে মুসা সুস্থ হওয়া পর্যন্ত সরকার ও সমাজ পাশে থাকবে, এই প্রত্যাশা আমার আপনাদের প্রতি। আপনারা দোয়া করবেন যেন মুসার মুখে আবার মা ডাক শুনতে পারি।’