অবশেষে মা–বাবার কোলে চড়ে হাসিমুখে ভোলার চরফ্যাশনের বাড়িতে ফিরেছে হারিয়ে যাওয়া ছোট্ট শিশু মোহাম্মদ নীরব।
২ বছর ৬ মাস বয়সী নীরব ২০ অক্টোবর রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। পরে শেরেবাংলা নগর থানার পক্ষ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
কিন্তু শিশুটির মা-বাবার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই তাকে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত আজিমপুরের ছোটমণি নিবাসে পাঠানো হয়েছিল। একপর্যায়ে নীরবের মা-বাবার খোঁজ পাওয়া যায়। আদালতের মাধ্যমে গতকাল সোমবার ছোটমণি নিবাস থেকে নীরবকে বুঝে পেয়ে বাড়িতে নিয়ে যান মা-বাবা।
২১ অক্টোবর প্রথম আলো অনলাইনে ‘শিশুটিকে রিকশাচালকের কাছে দিয়ে কোথায় গেলেন নারী যাত্রী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ২৫ অক্টোবর ‘রিকশাচালকের কাছে রেখে যাওয়া শিশুটির মা-বাবার খোঁজ পাওয়া গেছে’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলো অনলাইনে।
নীরবের বাবা মিন্টু মোল্লার চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখেই তাঁরা শিশুটির খোঁজ পান। শেরেবাংলা নগর থানা, ছোটমণি নিবাসসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি তাঁরা কৃতজ্ঞ।
সাইফুল ইসলাম আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, নীরব হারিয়ে যাওয়ার পর তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেছিলেন। বাসে বসে তিনি সুঠোফোনে এক আত্মীয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছিলেন। তখন পাশের আসনের এক যাত্রী তাঁকে জানান, হারিয়ে যাওয়া একটি শিশুকে নিয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনের লিংকটি তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান যাত্রী। ছবি দেখে শিশুটিকে চিনতে পারেন সাইফুল। পরে তিনি খবরটি শিশুটির বাবা মিন্টু মোল্লাকে জানান।
আজ মঙ্গলবার সকালে মিন্টু মোল্লার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি জানান, ছেলেকে নিয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরেছেন। ছেলে হাসিখুশি আছে। নীরব হারিয়ে যাওয়ার পর অনেকে তার জন্য দোয়া করেছেন। স্বজন সাইফুলসহ অনেকে ছেলেকে খুঁজে পাওয়া থেকে শুরু করে আইনি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছেন। সবার প্রতি তাঁরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন। ছেলেকে ফিরে পাওয়ায় প্রথম আলোকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দেন তিনি।
রাজধানীর আজিমপুরের ছোটমণি নিবাসের উপতত্ত্বাবধায়ক জুবলি বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে আমরা নীরবকে তার মা-বাবার কোলে তুলে দিই। পরে তাঁরা সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে চলে যান।’
শিশু নীরবের হারিয়ে যাওয়া ও উদ্ধারের ঘটনা সম্পর্কে ২১ অক্টোবর শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফাহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ২০ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে শিশুটিকে নিয়ে রিকশায় ছিলেন এক নারী (মা)। হুট করে নারী শৌচাগারে যাওয়ার কথা বলে রিকশাচালককে থামাতে বলেন। শিশুটিকে রিকশাচালককে একটু ধরতে বলেন নারী।
রিকশাচালক শিশুটিকে কোলে নেন। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও নারী আর না ফেরায় বিষয়টি হাসপাতালের আনসার সদস্যদের জানান রিকশাচালক। আনসার সদস্যরা আশপাশে নারীর খোঁজ করেন।
খোঁজ না পেয়ে তাঁরা জাতীয় জরুরি সেবার নম্বরে (৯৯৯) ফোন করেন। শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে। শিশুটি সুস্থ আছে কি না, তা জানার জন্য তাকে শ্যামলীর বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। দুই দিন পর আদালতের মাধ্যমে শিশুটিকে ছোটমণি নিবাসে পাঠানো হয়।
নীরবের বাবা মিন্টু মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্ত্রী নীলা বেগমের মানসিক সমস্যা আছে। তিনি কাউকে কিছু না বলে নীরবকে নিয়ে ঢাকায় চলে গিয়েছিলেন। তিনি আগেও এমনটা করেছিলেন। এবার ঢাকায় গিয়ে তিনি তাঁর স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখিয়েছেন।
মিন্টু মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার দিন নীরবকে রিকশাচালকের কাছে দিয়ে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকেছিলেন নীলা। পরে তিনি আর রাস্তা চিনে রিকশাচালকের কাছে ফিরতে পারেননি। ছেলেকে হারিয়ে নীলা মানসিকভাবে আরও অস্থির হয়ে পড়েন। তিনি কোনোভাবে গাজীপুরের শ্রীপুরে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে অন্য এক শিশুকে নিজের সন্তান বলে টানাটানি করতে থাকেন।
তখন লোকজন তাঁকে ছেলেধরা ভেবে থানায় নিয়ে যান। তাঁর মুঠোফোন নম্বরটি মনে রাখতে পেরেছিলেন স্ত্রী নীলা। শ্রীপুর থানা থেকে তাঁকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হয়। পরে নীলাকে থানা থেকে তাঁরা নিয়ে আসেন। অন্যদিকে, ঢাকায় নীরব উদ্ধার হয়েছে বলে খবরও পান তাঁরা।