আসকের তথ্য

দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ২০ বছরে নিহত ২,৯৫৪

একই ধারার গল্প—অপরাধের দায়ে আসামি ধরা। তাঁকে নিয়ে নতুন আসামি খুঁজতে বের হওয়া। প্রতিপক্ষের দিক থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা। বাধ্য হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি ছোড়া। আর তাতে আসামির মৃত্যু।

দুই দশকের বেশি সময় ধরে ‘ক্রসফায়ার-বন্দুকযুদ্ধ-এনকাউন্টার’ ইত্যাদি নামে চলে আসছে এমন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এতে দেশের প্রায় প্রতিটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই জড়িত।

এই গৎবাঁধা গল্পের সঙ্গে আরেকটি বিষয় এই বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে চলে আসছে। তা হলো এসব হত্যার বিচার না হওয়া। দেশে ২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কৈফিয়তহীন এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৯৫৪ জন। এ হিসাব ২০০৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এ হিসাব দিয়েছে। আসক এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে। সংবাদপত্র এবং নিজেদের তথ্যানুসন্ধানের ভিত্তিতেই এ তালিকা করেছে আসক।

দেখা গেছে, এ বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ, র‍্যাবসহ সরকারের নানা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র‍্যাব ও পুলিশ ছাড়াও যে বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ আছে, সেগুলো হলো ডিবি পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি, কোবরা টিম ও আনসার। আসকের হিসাবে, গত ২০ বছরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ আছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এরপর আছে র‍্যাব।

কেন ২০০৪ থেকেই বিচারবহির্ভূত হত্যার হিসাব

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও পরিস্থিতি উন্নয়নের নামে ২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‍্যাব গঠন করে। সেই সময় মানবাধিকারকর্মীসহ অনেকেই পুলিশ বাহিনীকে যুগোপযোগী এবং পেশাদার বাহিনীতে রূপান্তর করার দাবি করেছিলেন। কিন্তু সে দাবিকে পাশ কাটিয়ে র‍্যাব নামের এলিট ফোর্স গঠন করা হয়।

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, র‍্যাবের গঠন নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন বা কর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো উদ্বেগ অথবা শঙ্কা প্রকাশ করেননি। কিন্তু পরে এ বাহিনী ‘ক্রসফায়ার’–এর নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকেই সন্ত্রাস দমনের সবচেয়ে সহজ কৌশল হিসেবে বেছে নেয়। প্রথম দিকে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী এই প্রক্রিয়ায় নির্মূল হওয়ায় জনগণের একাংশ সন্তোষ প্রকাশও করেছেন। কিন্তু মানবাধিকারকর্মীদের পক্ষে র‍্যাবের এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। র‍্যাব গঠনের বছর না ঘুরতেই ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হওয়ার সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। পরে তা আরও বেড়েছে।

২০০৪ সালে যখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির অবনতিতে অনিরাপত্তাবোধের সৃষ্টি হয়, তখনকার সরকার পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে স্পষ্টতই ব্যর্থ হতে থাকে। সেই পটভূমিতে সরকারের ভেতরে ও বাইরেও একটি বিশেষ ক্ষমতাশালী বাহিনী গঠন করার আলোচনা উঠে আসে। তারই ফলে র‍্যাবের জন্ম।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘র‍্যাব গঠনের পর থেকেই বাহিনীটি ক্রসফায়ার ও এনকাউন্টারের মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ বাহিনীকেও এ ধরনের বেআইনি কার্যক্রমে যুক্ত হতে দেখা যায়। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপি সরকারের নেওয়া নীতির পরিবর্তন আমরা লক্ষ করিনি; বরং ধারাবাহিকতা দেখেছি। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার আসার পরও বাহিনীগুলো সতর্ক তো হয়ইনি; বরং অনেকটা যেন পরম্পরা রক্ষায় ব্যতিব্যস্ত ছিল। গত সরকারের আমলের মাদকবিরোধী অভিযানের নামে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অনেক বেশি লক্ষ করা গেছে।’

২০১১ সালে ‘অগোচরে অপরাধ: বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন তৈরি করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সেখানে বলা হয়, ‘র‍্যাবের বাহিনী গঠনের কয়েক মাসের মধ্যে র‍্যাবের অভিযানগুলো খুনের একটি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পরিচিতি পায়, যাকে কর্তৃপক্ষ বলছে “ক্রসফায়ারে মৃত্যু”। এমন অনেক মৃত্যুতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সুস্পষ্ট। দেখা যায়, সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের পর নির্জন স্থানে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে। কোনো কোনো ঘটনায় গ্রেপ্তারের প্রত্যক্ষদর্শী থাকলেও র‍্যাবের কর্তৃপক্ষ তাদের দাবিতে অটল থেকেছে। জানিয়েছে যে ঘটনার শিকার ব্যক্তি “ক্রসফায়ার” কিংবা “গোলাগুলি” কিংবা “বন্দুকযুদ্ধে” মারা গিয়েছে।’

বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিন্ন ‘গল্প’

দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাগুলো নানা বাহিনীর মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর এসব বাহিনীর পক্ষ থেকে ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়। সেসব বর্ণনাসংবলিত প্রেস রিলিজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরবরাহও করা হয়। সেগুলো থেকে দেখা গেছে, বাহিনীর মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও বিচারবহির্ভূত হত্যার বর্ণনা প্রায় অভিন্ন। শুধু স্থান, কাল ও ঘটনার পক্ষ-বিপক্ষের ক্ষেত্রেই যা ভিন্নতা। প্রথম আলোয় প্রকাশিত এমন তিনটি প্রতিবেদনে উঠে আসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিন্ন বয়ান।

গল্প ১

২০২২ সালের ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তিতে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মো. শাহীন নামের (সিটি শাহীন নামে পরিচিত) এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। র‌্যাব বলে, সেদিন দুপুরে র‍্যাব-১-এর একটি দল অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার অভিযানে গেলে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এতে র‍্যাবের অন্তত পাঁচ সদস্য আহত হন।

র‌্যাবের দাবি, নিহত শাহীন এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যার চেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২৩টি মামলা রয়েছে।

র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, শাহীনকে গ্রেপ্তার করতে চনপাড়ায় অভিযানে যায় র‍্যাব। র‍্যাবের কাছে তথ্য ছিল, শাহীন সেখানে একাই অবস্থান করছেন। এ সময় র‍্যাবকে লক্ষ্য করে শাহীনসহ ১০ জন গুলিবর্ষণ করেন। র‍্যাব পাল্টা গুলি ছুড়লে শাহীনের পায়ে কয়েকটি গুলি লাগে। আহত অবস্থায় তাঁকে আটক করে ঢাকার মুগদা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহীন মারা যান।

গল্প ২

কক্সবাজারের উখিয়ায় ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর রাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) নামের একজন মারা গেছেন বলে জানায় র‍্যাব। তাদের দাবি, জাহাঙ্গীর একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকসহ ছয়টি মামলা আছে। তিনি উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী জমিদারপাড়ার মৃত সৈয়দ আলমের ছেলে।

র‍্যাব জানায়, ২১ নভেম্বর রাতে উখিয়া উপজেলার বালুখালীর কাঁকড়া সেতু এলাকায় র‍্যাব-৭-এর একটি বিশেষ দলের সঙ্গে মাদক কারবারিদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ সময় তাঁরা র‍্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি করলে র‍্যাবও পাল্টা গুলি করে। একপর্যায়ে মাদক কারবারিরা পালিয়ে যান। পরে ঘটনাস্থল থেকে জাহাঙ্গীরের গুলিবিদ্ধ লাশ এবং ৭০টি ইয়াবা, একটি ওয়ান শুটারগান ও কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

গল্প ৩

কক্সবাজারের উখিয়ায় ২০২১ সালের ১৫ জুলাই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ লুৎফুর রহমান ওরফে লুতুয়া (৪০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনায় বিজিবির দুই সদস্য আহত হয়েছেন।

বিজিবি জানায়, লুৎফুর রহমান উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের নলবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা জালাল আহমদের ছেলে। তিনি মাদক কারবার ও ডাকাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। লুৎফুরের বিরুদ্ধে ডাকাতি, মাদক, অস্ত্র, নারী ও শিশু নির্যাতন, মারামারিসহ বিভিন্ন ঘটনায় এক ডজন মামলা রয়েছে।

কক্সবাজার ৩৪ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ বলেন, বিজিবির একটি দল নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে চিংড়ি খামার এলাকায় যায়। এ সময় পথে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে থামার সংকেত দেওয়া হলে তাঁরা বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালান। এতে বিজিবির দুই সদস্য আহত হন। আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালালে তাঁরা আঞ্জুমানপাড়া এলাকা দিয়ে প্যারাবনের দিকে পালিয়ে যান। এরপর বিজিবি সদস্যরা ওই এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ৫০ হাজার ইয়াবা, ১টি একনলা বন্দুকসহ গুলিবিদ্ধ লুৎফুরকে উদ্ধার করেন। পরে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিচারবহির্ভূত হত্যা: কোন সময়ে বাড়ল, কখন কমল

আসকের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটে ২০১৮ সালে। ওই বছর ৪১২ জন এ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটে পুলিশের হাতে, ২১৬টি। র‍্যাবের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হন ১৩৫ জন। অন্যান্য বাহিনীর হাতে এ ধরনের হত্যার ঘটনা ঘটে ১৭টি।

২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও বাহিনীর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ওই বছর দেশে ১৮৮ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হন। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরের বছরই হত্যার ঘটনা ঘটে ৫১টি। আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৪ সালের পর এর আগে বিচারবহির্ভূত কম হত্যা হয় ২০১৩ সালে, ৪২টি।

আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় র‍্যাব আসার পর থেকে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কমে যায়। হয়তো র‍্যাবের পরিস্থিতি দেখে পুলিশ কর্তৃপক্ষ সতর্ক হয়ে ওঠে। এখন প্রশ্ন, তাহলে নিষেধাজ্ঞা জারির পর বাহিনীগুলো এ ধরনের ক্রসফায়ার না করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখল কীভাবে? তাহলে আমরা বলতেই পারি, ২০০৪ সাল থেকে সংঘটিত এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ছিল সরকারগুলোর জনমনে ভীতি ছড়ানোর কৌশল। একটি সমাজব্যবস্থায় গত ২০ বছরে এত মানুষের জীবনের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন।

বিচার হয় না

২০১১ সালে ‘অগোচরে অপরাধ: বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন তৈরি করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এ ধরনের মৃত্যুকে (বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড) সাধারণত দুর্ঘটনাজনিত বলে চালিয়ে দেওয়া হয় কিংবা বলা হয়, র‍্যাব কর্মকর্তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি করায় “ক্রসফায়ার”–এ মারা গিয়েছে। অনেক ঘটনায় শিকার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর হত্যা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এ ধরনের মৃত্যুগুলোর ক্ষেত্রে র‍্যাব কিংবা সরকারের বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে কখনোই বিচারিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’

রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো যখন এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে জড়ায়, তখন তা জনমনে ভীতি বাড়িয়ে দেয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়।

সুলতানা কামাল বলছিলেন, সঠিক অর্থে জবাবদিহি করতে হয়নি বলে এই ২০ বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড তিন হাজারের কাছে পৌঁছেছে। এটি মানবাধিকারের দৃষ্টিতে অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অগ্রহণযোগ্য। একটি মানবিক বোধসম্পন্ন সমাজে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানো এবং তা সহ্য করা—উভয়ই মানবতার বিরুদ্ধে চরম অপরাধ।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কী করে

বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে মৃত্যু, নির্বিচার আটক ও গুম—এই চার ধরনের ঘটনাকে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করা হয়। কিন্তু জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ পর্যন্ত মাত্র একটি বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনার তদন্ত করে।

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভিযান পরিচালনা করে যশোরের কেশবপুর থানা-পুলিশ। কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন রজব আলী নামের এক ব্যক্তি। এ ঘটনা তদন্ত করে ওই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ঘটনার সঙ্গে পুলিশের বক্তব্যের অসংগতিও চিহ্নিত করে কমিশন বলেছিল, এই কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার সত্যতা নেই। কমিশনের ওই তদন্তের ঘটনা সাড়া ফেলে। কিন্তু ওই প্রথম, ওই শেষ তদন্ত।

এখন এই পরিবর্তিত রাজনৈতিক পটভূমিতে বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার করার একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন আবু আহমেদ ফয়জুল কবির। তিনি বলেন, যদি বর্তমান সরকার মনে করে এ ধরনের হতাকাণ্ডের ঘটনা বিচারের আওতায় আনবে, তাহলে যেন সব হত্যারই বিচারের উদ্যোগ নেয়। কেননা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পরিবারগুলো যন্ত্রণা নিয়ে এখনো বেঁচে আছে। আর এ দেশের মানবাধিকারকর্মীরা শুরু থেকেই এ হত্যাকাণ্ডগুলোর প্রতিবাদ করে এসেছে এবং প্রতিকারের আশায় এখনো দাবি করে যাচ্ছে।