সাইবার নিরাপত্তা বিল

একটি ধারা বাদ ও শব্দগত কিছু পরিবর্তন আসছে

  • সাইবার নিরাপত্তা বিলের ৩২ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত। এই ধারায় অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতাভুক্ত অপরাধ ও সাজার বিষয় ছিল।

  • বিলের ২১ ধারায় শব্দগত পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত। ‘প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণার’ বদলে ‘বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণা’ প্রতিস্থাপন হচ্ছে।

জাতীয় সংসদ ভবন

সাইবার নিরাপত্তা বিলে কিছু সংশোধন আনা হচ্ছে। তবে সেগুলো মূলত শব্দগত পরিবর্তন। এর বাইরে বিলের একটি ধারা (৩২ ধারা যেখানে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতাভুক্ত অপরাধ ও সাজার কথা বলা আছে) বাদ দেওয়া হচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কয়েকটি ধারা সংশোধনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সাংবাদিকদের কয়েকটি সংগঠনের নেতারা বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের আপত্তির একটি বড় জায়গা ছিল বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা। তবে এটি বাদ দেওয়া হচ্ছে না।

বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার সাইবার নিরাপত্তা বিল সংসদে তোলা হয়। এরপর বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আগে বলেছিলেন, বিলটি সংসদীয় কমিটিতে গেলে সেখানে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। গতকালের বৈঠকে সংসদীয় কমিটির আমন্ত্রণে শুধু সাংবাদিকদের কয়েকটি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁদের সবাই কমিটির সিদ্ধান্তে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হননি।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিলের ২১ ধারায় শব্দগত পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণাসংক্রান্ত অপরাধের কথা বলা আছে। এখানে ‘প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণার’ বদলে ‘বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণা’ প্রতিস্থাপন করা হবে।

বিলের ৩২ ধারা বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ধারায় অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতাভুক্ত অপরাধ ও সাজার বিষয় যুক্ত করা হয়েছিল। ডিজিটাল মাধ্যমে কেউ অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টভুক্ত অপরাধ করলে তার সাজার বিধান করতে এটি যুক্ত করা হয়েছিল।

বিলের ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া আছে পুলিশকে। এটি ধারা নিয়ে আপত্তি ছিল সাংবাদিকদের। এটি কিছুটা সংশোধন করে বহাল রাখা হচ্ছে। এখানে সংশোধনী এনে বলা হচ্ছে, এই ধারায় পুলিশ পরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তা (আগে ছিল উপপরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তা) বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করতে পারবেন।

বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অনেক পরিবর্তন করেছি। ২১ ধারার বিষয়ে বিএফইউজে থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, আমরা তা গ্রহণ করেছি। ৩২ ধারার অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট আমরা বাতিল করে দিয়েছি, এ আইনে সেটা থাকবে না।’

সাংবাদিক নেতারা সন্তুষ্ট নন

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নিয়েছিলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কমিটি কিছু বিষয়ে সংশোধনী এনেছে। ৪২ ধারায় (বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তার) সাব–ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তার স্থলে ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকতা করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁরা এ বিষয়টিতে সন্তুষ্ট নন। তাঁরা প্রেস কাউন্সিলের কথা বলেছেন।

বিশেষ আমন্ত্রণে বৈঠকে অংশ নেওয়া জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, ২১, ৩২ ধারাসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হয়েছে। ৪২ ধারায় সংজ্ঞায় কিছুটা সংশোধন আনা হয়েছে।

আমরা অনেক পরিবর্তন করেছি। ২১ ধারার বিষয়ে বিএফইউজে থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, আমরা তা গ্রহণ করেছি। ৩২ ধারার অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট আমরা বাতিল করে দিয়েছি, এ আইনে সেটা থাকবে না।
আনিসুল হক, আইনমন্ত্রী

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ১৪ দফা দাবি জানিয়েছিল বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)। বৈঠক শেষে সংগঠনের সভাপতি এম আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, কমিটি কয়েকটি দাবি মেনে নিয়েছে। দুয়েকটি জায়গায় ভাষাগত পরিবর্তন এনেছে। তবে তাঁরা এতে সন্তুষ্ট নন। বৈঠকে তাঁরা বলেছেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হয়, এমন ধারাগুলো বাতিল করে সংশোধনী আনা হলেই কেবল তাঁরা মেনে নেবেন।

বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাইবার নিরাপত্তা বিলের ওপর আলোচনা শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশোধিত, সংযোজিত ও পরিমার্জিত আকারে সংসদে প্রতিবেদন উত্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।

ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ অসুস্থতার কারণে বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁর পরিবর্তে গতকালের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন একই কমিটির সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ, ফাহমি গোলন্দাজ, আহমেদ ফিরোজ কবির, মো. নুরুল আমিন, মনিরা সুলতানা এবং জাকিয়া পারভীন খানম। সংসদীয় কমিটির বিশেষ আমন্ত্রণে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বৈঠকে অংশ নেন।

এ ছাড়া বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে আরও অংশ নেন জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজে একাংশের মহাসচিব দীপ আজাদ, বিএফইউজের আরেক অংশের মহাসচিব নুরুল আমিন, ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন প্রমুখ।

সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া প্রকাশের পর থেকেই মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন বলে আসছে, নতুন এই আইনেও কার্যত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মূল বিষয়বস্তু বহাল রাখা হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনে কিছু ক্ষেত্রে সাজা কমানো ও জামিনযোগ্য ধারা বাড়ানো হলেও অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। ফলে মানুষকে হয়রানি করার সুযোগ থেকেই যাবে।