ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বরিশালে নিহত ব্যক্তিদের স্বজন, আহত ও বিভিন্ন পেশার নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। বরিশাল, ১ নভেম্বর
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বরিশালে নিহত ব্যক্তিদের স্বজন, আহত ও বিভিন্ন পেশার নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। বরিশাল, ১ নভেম্বর

রাজনীতির কাঠামো জনগণ ঠিক করবে, এটাই নতুন রাজনীতি

জুলাই–আগস্টে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। আগে শাসক ও ব্যবসায়ীরা রাজনীতির কাঠামো নির্ধারণ করেছেন, এখন থেকে জনগণ তা ঠিক করবে। এটাই নতুন রাজনীতি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বরিশালে নিহত ব্যক্তিদের স্বজন, আহত ও বিভিন্ন পেশার নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা এ কথা বলেছেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বরিশাল শহরের এনেক্স ভবনের আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে শুক্রবার বিকেলে ‌‌‌‘বরিশাল রাইজিং’ শিরোনামে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য, আহত, আন্দোলনে বিভিন্ন জেলার সংগঠক, আইনজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, শ্রমিক এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্যরা বক্তব্য দেন।

মতবিনিময়ের শুরুতে আহত ব্যক্তিদের ফুল দিয়ে বরণ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যরা। পরে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে নিহত শাওন শিকদারের ভাই মারুফ শিকদার বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। আমরা চাই সবার অধিকার নিশ্চিত হোক। আমার ভাইয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন।’

বরিশাল বিএম কলেজের শিক্ষার্থী রহমত উল্লাহ বলেন, সবাই এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যস্ত। কোনো রাজনৈতিক দল আহত বা শহীদ পরিবারের জন্য কোনো উদ্যোগ বা কর্মসূচি করছে না।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গত ১৭ জুলাই আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলি চোখে লাগে বেলাল হোসেনের। তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার চোখের এখনো পূর্ণ চিকিৎসা হয়নি। আমি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ফলে পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছে।’

মতবিনিময় সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের। রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সমান মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুই হাজারের বেশি শহীদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেব না।’

আগামীর বাংলাদেশে কেউ রাজনীতি করতে চাইলে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে রাজনীতি করতে হবে বলে মন্তব্য করেন নাগরিক কমিটির আরেক সদস্য ফয়সাল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘এত দিন শাসক ও ব্যবসায়ীরা রাজনীতির কাঠামো নির্ধারণ করেছেন, এখন থেকে এই গেমের নিয়ম আপনারা, আমরা, তথা জনগণ ঠিক করবে। এটাই আমাদের নতুন রাজনীতি।’

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করছেন নাগরিক কমিটির সদস্য মাহমুদা মিতু। মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘শহীদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। সব তথ্য হালনাগাদ করে শহীদের তালিকা করতে বিলম্বিত হয়েছে। সামনে দ্রুত কাজ হবে।’

মতবিনিময় সভায় আন্দোলনে বরিশাল এলাকার সংগঠক সাব্বির হোসাইন, শাহাবুদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভা সঞ্চালনা করেন বরিশালের সংগঠক শাকিল মৃধা ও আবু সাঈদ মূসা।