পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব

যুক্তিতর্কের লড়াই শেষে বিজয়ীর ট্রফি মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরির

প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বিচারকদের নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দলের সদস্যদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। আজ বৃহস্পতিবার লালমাটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

শরতের রোদেলা সকাল থেকে দিন গড়িয়ে বৃষ্টিভেজা বিকেল। সারা দিন যুক্তিতর্কে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর আজ বৃহস্পতিবার পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব-২০২৩–এর ঢাকার ধানমন্ডি অঞ্চলের স্কুলগুলোর প্রতিযোগিতায় ট্রফি জিতেছে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি উচ্চবিদ্যালয়ের বিতার্কিক দল। ‘যোগ দাও যুক্তির মেলায়’ এই স্লোগান নিয়ে সকালে লালমাটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এতে ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

সারা দিন চারটি ধাপে এই প্রতিযোগিতায় যুক্তি-পালটা যুক্তিতে মেতে ওঠে তরুণ বিতার্কিকেরা। প্রথম পর্ব শুরু হয় সকাল ১০টায়। প্রথম পর্বের বিজয়ী দলগুলো অংশ নেয় দ্বিতীয় পর্বে। এই পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে হয় তৃতীয় পর্বের প্রতিযোগিতা। সেখান থেকে বিজয়ী দুই দল অংশ নেয় চূড়ান্ত পর্বে। এতে রানারআপ হয় সেন্ট জোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ দল। বিজয়ী মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের দল এখন অংশ নেবে জাতীয় প্রতিযোগিতায়। বিজয়ী দলে ছিল জারাহ বিনতে জহির, জেনিরা জান্নাত, আদিবা সুলতানা ও আবদুল কাসিম মোহাম্মদ।

প্রথম পর্বে বিতর্কের বিষয় ছিল ‘মাদকমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে পরিবার নয়, শিক্ষকের ভূমিকাই প্রধান’। দ্বিতীয় পর্বের বিষয় ছিল ‘তথ্যপ্রযুক্তির অধিক ব্যবহার পাঠাভ্যাস নষ্ট করছে’। তৃতীয় পর্বের বিষয় ছিল ‘এই সময় মেধাবী মানুষের চেয়ে মানবিক মানুষই বেশি দরকার’ এবং চূড়ান্ত পর্বে ছিল ‘পরিবেশ রক্ষায় ব্যক্তির ভূমিকাই প্রধান’।

দলীয় বিতর্কের পাশাপাশি একক পর্যায়ে ছিল ‘বারোয়ারি বিতর্ক’। এতে সেরা হয়েছে ওয়াইডব্লিউসিএর নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাধিকা মাধব।

বিতর্ক ছাড়া এ আয়োজনে ছিল নিম্নমাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম) ও মাধ্যমিক (নবম ও দশম) পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কুইজ প্রতিযোগিতাও। কুইজ প্রতিযোগিতায় নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে প্রথম হয়েছে ওয়াইডব্লিউসিএ উচ্চমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সুবাইতা তাজমীন, দ্বিতীয় হয়েছে স্কলার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওয়াসিফ মাজদার ও তৃতীয় হয়েছে লালমাটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের আদিবা আরিয়াত। তারা সবাই অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মাধ্যমিকে কুইজ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জুমাইয়া শামারুখ এবং দ্বিতীয় হয়েছে মাশরাতুল জান্নাত। আর তৃতীয় হয়েছে লেকসার্কাস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের আঁখি মণি। তারা সবাই দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

পুষ্টি-প্রথম আলো বিতর্ক উৎসব। আজ বৃহস্পতিবার লালমাটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে

ধানমন্ডি ও আশপাশের এলাকার ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫০ শিক্ষার্থী বিতর্ক ও কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। অংশগ্রহণকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো, জুনিয়র ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, সেন্ট জোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফিরোজা বাশার আইডিয়াল কলেজ, স্কলার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লালমাটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, নিউ মডেল বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, রায়েরবাজার উচ্চবিদ্যালয়, লেকসার্কাস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কাকলী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ওয়াইডব্লিউসিএ উচ্চমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়।

বিকেল চারটায় চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতা শেষে ছিল পুরস্কার বিতরণী। চূড়ান্ত পর্বের প্রধান বিচারক ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন সিপিডির যুগ্ম পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বিতার্কিক অভ্র ভট্টাচার্য। বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন বিতার্কিক অমিয় ভৌমিক, মণিকা ইয়াসমিন, রাজিয়া রহমান ও শেখ তানভীর আহমেদ। সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিতর্ক মানুষকে যুক্তিবাদী করে তোলে। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে সমাজে নিজের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ে।

প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বিচারকদের নিয়ে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। তিনি তরুণ বিতার্কিকদের উৎসাহিত করে বলেন, বিতর্ক জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। তবে ভালো শিক্ষার্থী ও বিতার্কিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভালো মানুষ হতে হবে। ভবিষ্যতের নাগরিক হিসেবে দেশকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে।

এর আগে সকালে পুষ্টি-প্রথম আলো বিতর্ক উৎসবের এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন লালমাটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি স্কুলশিক্ষার্থীদের নিয়ে এই আয়োজনের জন্য প্রথম আলোকে ধান্যবাদ জানিয়ে বলেন, সারা দেশে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের যে ধারা চলছে, তাতে এ ধরনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি বিতর্কচর্চার মাধ্যমে তারা পরমত সহিষ্ণুতার শিক্ষা লাভ করবে এবং ভবিষ্যতে যুক্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ‘যুক্তিতে মুক্তি’—এই ভাবনা তাদের একজন ভালো নাগরিক হয়ে উঠতেও অনুপ্রাণিত করবে।

পুষ্টি-প্রথম আলো বিতর্ক উৎসবে উপস্থিত দর্শকদের একাংশ। আজ বৃহস্পতিবার লালমাটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন লালমাটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রোজিনা আক্তার।

বিতর্কের কৌশল ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার সমন্বয়ক সাইদুজ্জামান রওশন। বিতর্ক উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে প্রথম আলো বন্ধুসভা, প্রচার সহযোগী নাগরিক টেলিভিশন।

উল্লেখ্য এবার দেশব্যাপী পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব শুরু হয়েছিল ২৭ মে ঢাকার সেন্ট জোসেফ উচ্চমাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ থেকে। দেশের ৩৫টি জেলায় এবং রাজধানী ঢাকায় ৫টি এলাকায় বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি জেলার শ্রেষ্ঠ দল ও ঢাকার পাঁচটি সেরা দল এই ৪০টি দল নিয়ে হবে জাতীয় পর্যায়ের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা।

কাল রামপুরা এলাকার প্রতিযোগিতা: আগামীকাল শুক্রবার রামপুরা অঞ্চলের স্কুলগুলো নিয়ে পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসবের প্রতিযোগিতা হবে আফতাব নগরের ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজে।