বান্দরবানের রুমায় বিশুদ্ধ পানি ও খাওয়ার স্যালাইন বিতরণ করতে গিয়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা বোমা (আইইডি) বিস্ফোরণে সেনাবাহিনীর এক সদস্য নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বেলার দেড়টার দিকে রুমা উপজেলার ছিলোপিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সেনাসদস্যের নাম মোন্নাফ হোসেন। তিনি সৈনিক পদে কর্মরত ছিলেন। আজ শনিবার সন্ধ্যায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের হামলায় পাঁচ সেনাসদস্য নিহত হলেন।
আইএসপিআর জানায়, সেনাবাহিনীর টহল দল ছিলোপিপাড়া টিওবি (টেম্পোরারি অপারেটিং বেজ) থেকে বিশুদ্ধ পানি ও খাওয়ার স্যালাইন বিতরণের জন্য পাইনুমপাড়া এলাকায় যাচ্ছিল। পথে ক্যাম্প থেকে আনুমানিক ৪০০ মিটার দূরে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিক্ষিপ্তভাবে পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণের শিকার হয় তারা। এ সময় সৈনিক মোন্নাফ হোসেন (২১) ও সৈনিক মো. রেজাউল (২৪) শরীরের বিভিন্ন অংশে স্প্লিন্টারের আঘাতে গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় তাঁদের জরুরি ভিত্তিতে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোন্নাফ হোসেনের মৃত্যু হয়।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, নিহত সেনাসদস্য মোন্নাফ হোসেনের শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়োজিত কার্যক্রমের পাশাপাশি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের মানবিক সহযোগিতা দিতে গিয়ে সেনাসদস্যের এই সর্বোচ্চ ত্যাগ জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এর আগে ১ জুন রুমা উপজেলার ছিলোপিপাড়া এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি টহল দল সন্ত্রাসীদের বিক্ষিপ্তভাবে পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণের মুখে পড়ে। বিস্ফোরণে আহত এক সেনাসদস্যকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হেলিকপ্টারে দ্রুত চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈনিক তুজাম (৩০) মৃত্যুবরণ করেন।
গত ১৬ মে রুমাতেই আইইডি বিস্ফোরণ ও অতর্কিত গুলিতে সেনাবাহিনীর দুজন সৈনিক নিহত হন। সে ঘটনায় আহত হন আরও দুই কর্মকর্তা। তারও আগে চলতি বছরের মার্চে বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর কেএনএর অতর্কিত গুলিবর্ষণে সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন নিহত হন। আহত হন আরও দুই সেনাসদস্য।
পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে অভিযান পরিচালনা করছে। কেএনএফের কথিত সামরিক শাখার নাম কেএনএ। এর আগে এ সশস্ত্র গোষ্ঠীর আস্তানায় অভিযান চালিয়ে দেশের নতুন জঙ্গি গোষ্ঠী জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই আস্তানায় সমতল থেকে আসা জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিত বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এর আগে জানানো হয়েছে।
কেএনএফ নামে সংগঠনটি গড়ে ওঠে বান্দরবানের রুমা উপজেলায়। এর প্রধান রুমা উপজেলা সদর বাজারের বাসিন্দা নাথান বম। তিনি ২০১২ সালে কুকি–চিন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনস (কেএনডিও) নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। সেটি পরবর্তী সময়ে কেএনএফ নামে সশস্ত্র সংগঠনে রূপান্তর করেন।