দুর্ঘটনায় দুই সহপাঠীর মৃত্যুতে বিক্ষুব্ধ চুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে কাপ্তাই রাস্তা অবরোধ করেন। এ সময় সড়কে গাছ ফেলে টায়ারে আগুন দেন তারা। আজ বেলা ১২টায়
দুর্ঘটনায় দুই সহপাঠীর মৃত্যুতে বিক্ষুব্ধ  চুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে কাপ্তাই রাস্তা অবরোধ করেন। এ সময় সড়কে গাছ ফেলে টায়ারে আগুন দেন তারা। আজ বেলা ১২টায়

‘দয়া করে আমারে হাসপাতালে নিয়া যান ভাই’

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার জিয়ানগরে গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেরিয়ে বাসের ধাক্কায় দুর্ঘটনার শিকার হন চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালের (চুয়েট) তিন শিক্ষার্থী। তাঁদের একজন তৌফিক হোসাইন। দুর্ঘটনার পর তাঁর জ্ঞান ছিল। আশপাশে থাকা পথচারীদের আকুতি জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান ভাই। দয়া করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।’

ওই মুহূর্তের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায়, তৌফিকের সাদা রঙের প্যান্ট ও কালো শার্ট ছিঁড়ে গেছে। তিনি পড়ে আছেন মাটিতে। তখনো কথা বলছিলেন। আকুতি জানাচ্ছিলেন। এরপর এক পথচারীকে বলতে শোনা যায়, ‘দ্রুত সিএনজি অটোরিকশা ডাক। ৯৯৯ নম্বরে ফোন দে।’ অবশ্য কেউ কেউ এ দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করতে ব্যস্ত ছিলেন।

এরপর তৌফিককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছানোর আগে পথেই মৃত্যু হয় পুরকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এ শিক্ষার্থীর। ঘটনাস্থলের মারা যান একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা। আহত হন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু।

তৌফিকের আকুতির ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তৃতীয় বর্ষের তাহমিদ আহনাফ, আসাদুল্লাহ গালিব ও চতুর্থ বর্ষের শায়লা শাহরিন প্রথম আলোকে বলেন, তৌফিকের পড়ে থাকার দৃশ্য ভিডিও না করে আরও আগে যদি তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া যেত, তবে হয়তো তাঁর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল। কারণ, ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, তৌফিক কিছুটা স্বাভাবিক থেকে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন।

ফাইয়াজ মোহাম্মদ নামের এক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, দ্রুতগতির শাহ আমানত পরিবহন সড়কের নিয়ম কানুন মানে না। বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। স্থানীয় লোকজনেরদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ওভারটেক করতে গিয়ে বাসটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়।

উত্তাল চুয়েট, সড়ক বন্ধ এখনো

ঘাতক বাসের চালক ও সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি কঠোর সাজার দাবিতে সড়কে নেমে আসে শিক্ষার্থীরা। আজ বেলা ১২টায় চুয়েট ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায়

সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে চুয়েট ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনের কাপ্তাই সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শত শত শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি সড়কে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভের কারণে কাপ্তাই সড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে।

বেলা একটায় সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। তাঁদের স্লোগান ছিল, ‘অ্যাম্বুলেন্স বাজারে, আমার ভাই হাসপাতালে’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’।

এর আগে বেলা পৌনে একটায় মূল ফটকের সামনে গায়েবি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নেন উপাচার্য মোহাম্মদ রফিকুল আলমসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা।

সাত দাবি, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ

সড়ক অবরোধের কারণে অনেক যাত্রীকে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হতে দেখা যায়

আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা সাতটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো পলাতক চালক ও তাঁর সহযোগীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, সব সুযোগ–সুবিধাসংবলিত ক্যাম্পাসে আধুনিক চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন, আধুনিক সরঞ্জামসহ অ্যাম্বুলেন্স–সুবিধা দেওয়া, রাস্তার মাথা এলাকা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত চার লেন মহাসড়ক করা, প্রতিটি বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার কাগজপত্র ও চালকদের লাইসেন্স নিয়মিত যাচাই করা, ছাত্রকল্যাণ পরিষদকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং ছাত্র প্রতিনিধিদল গঠন করা, নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

এসব দাবি লিখিতভাবে না মানার অঙ্গীকারের আগপর্যন্ত চুয়েটের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে বলে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম, শিক্ষার্থীরা এখনো আমাদের কাছে কোনো দাবি নিয়ে আসেনি। ওরা প্রেসব্রিফিং করে জানিয়েছে কিন্তু আমাদের কাছে কোনো দাবি নিয়ে আসেনি। বিকেল ৩টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আলোচনা সভা শেষে আমরা সিদ্ধান্ত জানাবো।