মির্জা ফখরুল
মির্জা ফখরুল

নির্বাচন প্রসঙ্গে

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বিএনপি

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বিএনপি। গত বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে নেতারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এত তাগিদের পর প্রধান উপদেষ্টা শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন; কিন্তু এ বিষয়ে তিনি ‘রহস্য’ রেখে দিয়েছেন, যা বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা সংশয়-সন্দেহের উদ্রেক করছে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা যে সময়ের কথা বলেছেন, তা বিএনপির কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে রোডম্যাপ দেবেন। সেটা তিনি দেননি। এটা আমাদের কিছুটা হতাশ করেছে এবং একই সঙ্গে জাতিকেও কিছুটা হতাশ করেছে।’

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি তার রাজনৈতিক মিত্র দলগুলোর সঙ্গে শিগগির মতবিনিময় শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দলের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। সেখানে তিনি নির্বাচনের সময়ের ব্যাপারে বলেন, মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথম অংশের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়। এ ব্যাপারে

বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন, তা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপদেষ্টার ভাষণের যে ব্যাখ্যা দেন, তা নিয়েও সভায় আলোচনা হয়।

স্থায়ী কমিটি মনে করে, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনসংক্রান্ত বক্তব্য অস্পষ্ট। তাঁর বক্তব্যে নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়ের কথা বলা হলেও নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখা হয়নি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের প্রথমাধে৴ অনুষ্ঠানের কথা বলেন। তাঁর প্রেস সচিব বলেছেন, ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, এ ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আরও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঠিক আমরা বুঝতে পারছি না যে, কোনটা সঠিক (প্রধান উপদেষ্টা, নাকি প্রেস সচিবের বক্তব্য)।’

বিএনপির মহাসচিব জানান, তাঁদের দলের স্থায়ী কমিটি মনে করে, যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়ে গেছে, সেহেতু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিলম্বের প্রয়োজন নেই। নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। জনগণ এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রত্যাশা করে। স্থায়ী কমিটির সভায় বলা হয়, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা উচিত।

স্থায়ী কমিটির এই সভায় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী–সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিষয়েও আলোচনা হয়। সভা এই রায়ের প্রশংসা করে বলেছে, পঞ্চদশ সংশোধনীর অন্যান্য বিষয় পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের বিবেচনার জন্য আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং সংবিধানের সব ধরনের সংশোধনী একমাত্র নির্বাচিত সংসদেরই এখতিয়ার বা কর্ম। এই রায়ে আদালত স্বীকৃতি দিয়েছেন যে নির্বাচিত পরবর্তী সংসদই সংবিধান সংশোধনীর একমাত্র উপযুক্ত ফোরাম।

তবে স্থায়ী কমিটির সভার মূল্যায়ন হচ্ছে, উন্মুক্ত আদালতে রায়ের ঘোষণার সময়ে আদালত কিছু কিছু বিষয়ে মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণসহ উক্ত সংশোধনীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন এবং কিছু অংশ সংরক্ষণ করেছেন এবং অধিকাংশ আগামী সংসদের বিবেচনার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন; কিন্তু এই মামলার রিট আবেদনকারীরা, সংযুক্ত হওয়া রাজনৈতিক দলগুলো এবং অন্যান্য অংশীজন এবং দেশের আপামর জনসাধারণ আদালতের কাছে আরও বেশি কিছু সিদ্ধান্ত আশা করেছিল।

স্থায়ী কমিটির সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চু৵য়ালি যুক্ত হন। তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম ছাড়াও খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।