বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন কত? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আরও অন্তত তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে।
কারণ, সবশেষ জনশুমারির প্রাথমিক ফলাফল ২৭ জুলাই প্রকাশ করার কথা রয়েছে। এই ফলাফল প্রকাশিত হলে দেশের জনসংখ্যার একটা হিসাব জানা যাবে।
প্রধানত দুটি উৎস থেকে দেশের জনসংখ্যাবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়।
প্রথমত, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) নিয়মিত জনসংখ্যা-সংশ্লিষ্ট নানা তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করে।
দ্বিতীয়ত, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর জনসংখ্যার কিছু তথ্য দেয়। অধিদপ্তর জনসংখ্যা বিষয়ে কাজ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান।
প্রতিবছর ১১ জুলাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও ‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস’ পালন করে। কিন্তু এ বছর দেশে ১১ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি ছিল। তাই বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয় ২১ জুলাই।
সেদিন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটি বা তার কিছু বেশি।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসে দেশের জনসংখ্যা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেওয়া এই তথ্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশের জনসংখ্যা কত, তা নিয়ে সঠিক তথ্যের ঘাটতি আছে। দেশের জনসংখ্যা নিয়ে নানা প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেওয়ায় জনমনে একধরনের বিভ্রান্তি আছে। এই বিভ্রান্তির কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের আস্থা নেই।
তবে গোল বাধে জনসংখ্যা নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দেওয়া তথ্যে। একই দিন সভাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের একটি বিশেষ প্রকাশনা দেওয়া হয়। ঝকঝকে প্রকাশনাটি জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে করা হয়।
প্রকাশনায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানুর লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। দেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটি।
অন্যদিকে জনসংখ্যা নিয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরো দিচ্ছে ভিন্ন তথ্য। ‘কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনের উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর সংখ্যা নির্ধারণের সুবিধার্থে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা’-এর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দিয়েছিল পরিসংখ্যান ব্যুরো। পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছিল, ২০২১ সালের ১ জুলাই দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৭ কোটি ৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৭।
২০২১ সালের ১ জুলাইয়ের পর এক বছর পার হয়েছে। এই এক বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে।
জনসংখ্যাবিদেরা বলছেন, দেশে প্রতিবছর ৩২ থেকে ৩৩ লাখ নতুন শিশু জন্ম নেয়। এক বছরে শিশুসহ প্রায় আট লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব হিসাব অনুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যার সঙ্গে প্রতিবছর ২৪ থেকে ২৫ লাখ মানুষ যুক্ত হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়ার প্রাক্কলিত জনসংখ্যার সঙ্গে এই সংখ্যা যোগ করলে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ৩০ লাখ।
তবে গতকাল শনিবার জনশুমারিতে দেশের জনসংখ্যা খুব একটা বাড়েনি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫০ লাখের বেশি হবে। সামান্য কিছু হয়তো পরে বাড়বে বন্যাকবলিত এলাকা ধরে।
১১ বছর পর গত জুনে দেশে ষষ্ঠ জনশুমারি হয়। ১৫ জুন জনশুমারি শুরু হয়ে চলে ২১ জুন পর্যন্ত। ষষ্ঠ এই জনশুমারি করা হয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে। আগের পাঁচটি জনশুমারি হয় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে।
২০১১ সালের পঞ্চম জনশুমারিতে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৯৮ লাখ। ১৯৭৪ সালের প্রথম আদমশুমারিতে জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ।