বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড টমি হিলফিগারের আয়োজনে ‘টমি হিলফিগার ফ্যাশন ফ্রন্টিয়ার চ্যালেঞ্জ-২০২২’ পুরস্কার জিতেছে বাংলাদেশি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগ ‘মনের বন্ধু’। এ পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ লাখ ইউরো (১ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি)। সারা বিশ্বের ফ্যাশনশিল্পের জন্য উদ্ভাবনী ও ভবিষ্যৎমুখী নতুন উদ্যোগগুলোর (স্টার্টআপ) জন্য ২০১৮ সাল থেকে এ পুরস্কার দিচ্ছে টমি হিলফিগার। সহজে ও সুলভে তরুণ, নারী এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে মনের বন্ধু এই পুরস্কার পেল।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে নেদারল্যান্ডসের অ্যামস্টারডামে টমি হিলফিগারের বৈশ্বিক প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ফ্যাশন ফ্রন্টিয়ার চ্যালেঞ্জ-২০২২–এর মূল আয়োজন। ৯ মাস ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় ২৫৬টি উদ্যোগ যাচাই–বাছাই করে ৫টি উদ্যোগ চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচিত হয়। আমস্টারডামে এ পাঁচ ফাইনালিস্ট তাঁদের ব্যবসায়িক ভাবনা বিচারকদের সামনে উপস্থাপন করেন। কাল রাতে পিভিএইচ করপোরেশনের আওতাধীন টমি হিলফিগার প্রতিযোগিতার দুই বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেছে। বিচারকদের রায়ে টমি হিলফিগার ফ্যাশন ফ্রন্টিয়ার চ্যালেঞ্জ-২০২২ বিজয়ী হয়েছে বাংলাদেশের মনের বন্ধু এবং সঙ্গে ব্রিটিশ উদ্যোগ কোয়ালা। কোয়ালা দুর্ঘটনাজনিত কারণে অঙ্গহানি হওয়া, পুড়ে যাওয়া মানুষের জন্য ফ্যাশনেবল প্রস্থেটিক পরিধেয় নিয়ে কাজ করছে। পুরস্কারের অর্থমূল্য ছাড়াও টমি হিলফিগার ও ইনসিড বিজনেস স্কুলের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে এক বছরব্যাপী পরামর্শ (মেন্টরশিপ) পাবেন বিজয়ীরা। পাশাপাশি ইনসিড হ্যানস ওয়াল ইমপ্যাক্ট এন্ট্রাপ্রেনারশিপ কর্মসূচির আওতায় বিজয়ীদের কাজের জায়গাও দেওয়া হবে।
আমস্টারডামে এ পুরস্কার দেওয়ার জমকালো আয়োজনে টমি হিলফিগারের প্রধান টমি হিলফিগার বলেন, ‘আমাদের শিল্পে যাঁরা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কাজ করছেন, একটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড হিসেবে সেই সব উদ্ভাবককে সহায়তা করা আমাদের দায়িত্ব। এ পুরস্কার সেই দায়িত্বেরই একটা অংশ। ফ্যাশন খাতের মানুষদের একে অপরের সঙ্গে যুক্ত করতে আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। প্রত্যেক ফাইনালিস্ট যে ইতিবাচক মনোভাব ও উদ্যোগ নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছেন, তাতে আমি আশাবাদী যে আমরা ঠিক পথেই আছি।’
আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সহজে ও সুলভে দিতে চেয়েছি। সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা যাতে এই সেবা পান, সেই চেষ্টাই আমরা করে যাই। এই পুরস্কার আমাদের আগামী দিনের কাজে আরও উৎসাহ জোগাবেতৌহিদা শিরোপা, আমস্টারডাম থেকে
মনের বন্ধুর পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন উদ্যোগটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তৌহিদা শিরোপা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মনের বন্ধুর রিসার্চ ও স্ট্র্যাটেজি প্রধান শিখ্তী সানী। আমস্টারডাম থেকে মুঠোফোনে তৌহিদা শিরোপা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে সহজে ও সুলভে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে চেয়েছি। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরাও যাতে এই সেবা পান, সেই চেষ্টাই আমরা করে যাই। এই পুরস্কার আমাদের আগামী দিনের কাজে আরও উৎসাহ জোগাবে।’
চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় নিজেদের চলমান কাজের বিবরণের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যসেবার নতুন একটি ভাবনাও উপস্থাপন করে মনের বন্ধু। শিগগিরই এই ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটবে বলে জানালেন তৌহিদা শিরোপা। তিনি জানান, ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশের ৭৫টি তৈরি পোশাক কারখানার সাড়ে ৩৭ হাজার পোশাক শ্রমিককে একক মানসিক কাউন্সেলিং সেবা দিয়েছে মনের বন্ধু। এর বাইরে প্রায় ২ লাখ পোশাককর্মীকে দলগত কাউন্সেলিং করানো হয়েছে।
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগ মনের বন্ধু সরাসরি সেবা দেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমেও সেবা দিয়ে থাকে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে ইউএন–উইমেন এশিয়া–প্যাসিফিক অ্যাওয়ার্ড ফর জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি (২০২২), জিজিইএস ইকো গেম চেঞ্জার অ্যাওয়ার্ড (২০২২), কমনওয়েলথ ডিজিটাল হেলথ অ্যওয়ার্ড (২০২১), তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগে কল ফর নেশন (২০২০) অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু দেশি–বিদেশি স্বীকৃতি পেয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য করতে গত মাসে ‘মনের বন্ধু’ নামে একটি অ্যাপও চালু করা হয়েছে।