ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেহেতু আছেন, সেহেতু দুই দেশের অভিন্ন ৫৪ নদীর পানিবণ্টনের সমস্যার সুরাহা হয়ে যাবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিস্তা চুক্তিসহ দুই দেশের অমীমাংসিত সব সমস্যা শিগগির সমাধান হয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে নরেন্দ্র মোদির পাশে দাঁড়িয়ে এই আশাবাদ জানান শেখ হাসিনা। দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে বৈঠক করেছি। সামনের দিনগুলোয় আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আমরা দ্বিপক্ষীয় বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।’
বক্তব্যে ভারতকে বাংলাদেশের নিকটতম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে পরিচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গত এক দশকে দুই দেশ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দুই দেশ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চেতনায় অনেক অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করেছে। আমরা আশা করছি, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইসহ অমীমাংসিত সবগুলো বিষয়ের সমাধান খুব দ্রুত হয়ে যাবে।’
কুশিয়ারা নদীর পানির বিষয়টি সুরাহা করতে পারায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব মিলিয়ে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। আমি আশা করি, যতক্ষণ প্রধানমন্ত্রী মোদি এখানে রয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারত এ সমস্যাগুলোর সমাধান করে ফেলবে।’
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশেষ ঘনিষ্ঠতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে স্মৃতিচারণা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাবা–মা সব হারিয়ে দুই বোন যখন অসহায়, তখন আমরা ভারতে আশ্রয় পেয়েছিলাম। শুধু আমি না, আমাদের পরিবারের কেউ গুলি খেয়ে আহত অবস্থায় এখানেই আশ্রয় নিয়েছিল।’
দুই প্রতিবেশী দেশ অনেক বিষয় নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমাধান করতে পেরেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই আমি মনে করি, আমরা বন্ধুপ্রতিম দেশ। দুই দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা, শুধু আমাদের দুই দেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সকল এলাকা মিলেই যেন এই অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে আরও উন্নত হোক, সমৃদ্ধিশালী হোক এবং সবাই উন্নত জীবন পায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুই প্রতিবেশী প্রতিবেশীর সঙ্গে সমস্যা থাকতেই পারে। সেগুলো আলোচনা করে সমাধান করা যায়, সেটার দৃষ্টান্ত আমরা দেখিয়েছি। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণে সেটা পেয়েছেন। কাজেই আজকেও আমরা কয়েকটি এমওইউ সই করেছি, যেটা আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক আরও উন্নত করবে।’
ভারতে আসাটা তাঁর জন্য সব সময় আনন্দের বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তিন বছর পর এবার এলাম। ছয় বছরের নির্বাসনে এখানে শরণার্থী হিসেবে ছিলাম। সেই স্মৃতিও মনে পড়ে। তখনো সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি। কাজেই ভারত–বাংলাদেশের বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক। ভারত–বাংলাদেশের বন্ধুত্ব অটুট থাকুক।’