বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের সঙ্গে বিদেশি শ্রমিকবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি পর্যালোচনা করার ঘোষণা দিয়েছে মালয়েশিয়া। দেশটি বলছে, শ্রমশোষণের প্রবণতা বন্ধ এবং বিভিন্ন খাতে জনশক্তির ভারসাম্য নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত বছর মালয়েশিয়ায় যাওয়া কয়েক হাজার বিদেশি শ্রমিক (বেশির ভাগই বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে যাওয়া) চাকরি না পেয়ে দুর্দশার মধ্যে পড়েন। মালয়েশিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠান তাঁদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিল, সরকারের নির্ধারিত নিয়োগ ফির চেয়ে বেশি ফি দেওয়া হলে তাঁরা চাকরি পাবেন। তবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর তাঁরা চাকরি পাননি। এখন তাঁরা কষ্টে আছেন।
মালয়েশিয়ায় কাজ করতে যাওয়া বিদেশি শ্রমিকদের অনেকে কর্মস্থলে নিপীড়নের শিকার হওয়ারও অভিযোগ করে থাকেন। জোর করে কাজ করানোর অভিযোগে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালয়েশিয়ার কয়েকটি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। অনেক শ্রমিক অভিযোগ করেন, তাঁদের কোনো পারিশ্রমিকই দেওয়া হয়নি।
অভিবাসী শ্রমিকদের এমন নানা সমস্যার সমাধান করতে সমঝোতা চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করতে চাইছে মালয়েশিয়া।
গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদবিষয়ক মন্ত্রী স্টিভেন সিম ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন ইসমাইল। তাঁদের ভাষ্য, দেশটির পুরো অর্থনীতিতে শ্রমবণ্টনের বিষয়টি অসম অবস্থায় আছে। এতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো পর্যালোচনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তাঁরা জানান, মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে জনবলের সংখ্যা নির্ধারিত কোটা ছাপিয়ে গেলেও কৃষি ও বনায়ন খাতে লোকবলের ঘাটতি এখনো আছে।
মন্ত্রী স্টিভেন সিম বলেন, শত শত শ্রমিককে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর চাকরি দেয়নি—এমন অভিযোগ ওঠা পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তদন্ত শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, যেসব নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এমন শ্রমিকদের ভাড়া করেছিল, তাদের চাকরি থাকুক বা না থাকুক অবশ্যই মজুরি দিতে হবে। যেসব কোম্পানি ও ব্যক্তি আইন লঙ্ঘন করবে, তারা অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগ দিতে পারবে না। স্টিভেন সিম আরও বলেন, ৭৫১ জন বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক মালয়েশিয়ার শ্রম বিভাগে মামলা করেছেন। তাঁরা তাঁদের পাওনা মজুরি দাবি করে মামলাগুলো করেছেন। এ পাওনা মজুরির পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি ১১ লাখ টাকা (১ রিঙ্গিত ২৩.২৬ টাকা হিসেবে)।
মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিকদের ৭০ শতাংশের বেশি বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও নেপাল থেকে যাওয়া। বাকি ৩০ শতাংশ ভারত, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডের।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন ইসমাইল বলেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে বিদেশি শ্রমিকসংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় যে চুক্তিগুলো আছে, সেগুলোর বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া নিয়োগ ফি, অন্যান্য খরচ, চুক্তির ধারা, স্বাস্থ্য এবং এ–সংক্রান্ত অন্য বিষয় পর্যালোচনা করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার বিভিন্ন খাতে কোটা অনুযায়ী শ্রমিক স্থানান্তরেরও অনুমতি দেবে।