রোগতত্ত্ববিদেরা বলছেন, বৃষ্টির মৌসুম শেষ হওয়ার এক থেকে দেড় মাস পর ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। আক্রান্ত ও মৃত্যু এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। রোগতত্ত্ববিদেরা বলছেন, বৃষ্টির মৌসুম শেষ হওয়ার এক থেকে দেড় মাস পর ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ২ হাজার ৬১৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে ১ হাজার ৫৫ জনের মৃত্যু হলো।
এর মধ্যে ৬৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে। বাকি ৩৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা শহরের বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে।
সংক্রমণ বা মৃত্যু কমার জন্য যা যা করার প্রয়োজন ছিল, তার কোনো কিছুই করা হয়নি। বৃষ্টিও বন্ধ হয়নি। আমরা আশা করতে পারি, বৃষ্টি পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সংক্রমণ কমতে থাকবে, তার কিছুদিন পর মৃত্যুও কমতে থাকবেরোগতত্ত্ববিদ মুশতাক হোসেন
ডেঙ্গুতে নির্দিষ্ট কোনো বছরে এত মৃত্যু এর আগে দেশে কখনো হয়নি। একইভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যাও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ১৬ হাজার ৮৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
গত তিন (জুলাই–সেপ্টেম্বর) মাসের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতি মাসে আক্রান্তের ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের মাসের চেয়ে বেশি। আর চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম পাঁচ দিনের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। এ বছরের জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এবং হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু সংখ্যা বাড়তে থাকে।
আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে। দৈনিক গড়ে ২ হাজার ৬৫৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন এবং গড়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়।
গত জুলাই মাসে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৪১৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। আর প্রতিদিন মারা গেছেন গড়ে ৭ জন। এরপর আগস্ট মাসে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ৩২২ জন করে রোগী ভর্তি হন এবং মারা যান ১১ জন।
আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে। দৈনিক গড়ে ২ হাজার ৬৫৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন এবং গড়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়।
চলতি বছরের চেয়ে গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের ও মৃত্যুর সংখ্যা কম ছিল। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে রোগতত্ত্ববিদেরা বলছেন, চলতি অক্টোবর মাসে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। কারণ, গত বছর সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল অক্টোবর মাসে।
আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৯৩২ জন। দৈনিক গড়ে ৭০৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। আর এই অক্টোবর মাসের প্রথম পাঁচ দিনে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ হাজার ৪৫৮ জন।
অর্থাৎ দৈনিক গড়ে ২ হাজার ৬৯২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এই গড় গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে বেশি এবং এ বছরের যেকোনো মাসের গড়ের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে এই পাঁচ দিনে ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দৈনিক গড়ে মৃত্যু ১৩ জনের। এই গড় মৃত্যু চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের সমান এবং অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি।
রোগতত্ত্ববিদ মুশতাক হোসেন বলেন, ‘সংক্রমণ বা মৃত্যু কমার জন্য যা যা করার প্রয়োজন ছিল, তার কোনো কিছুই করা হয়নি। বৃষ্টিও বন্ধ হয়নি। আমরা আশা করতে পারি, বৃষ্টি পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সংক্রমণ কমতে থাকবে, তার কিছুদিন পর মৃত্যুও কমতে থাকবে।’