গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার আগে ৩১ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে স্বাধীন দুদক তখন কিছু করার ‘সাহস’পায়নি। এখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই সব প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। ইতিমধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুও হয়েছে।
প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী (এখন সাবেক) রয়েছেন ১১ জন। সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন ১৯ জন। এর বাইরে প্রয়াত একজন মন্ত্রীর ছেলেও রয়েছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছিল দুদক। কিন্তু সরকারের দিক থেকে ‘ইশারা’না পাওয়ায় তখন কারও বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান শুরু করা হয়নি। দুদকের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।
আর যেন কোনো রাজনৈতিক দল মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করতে না পারে, সেই বিষয়টি বলেছিবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ
ওই তালিকায় সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন শাজাহান খান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, গাজী গোলাম দস্তগীর, আবদুর রহমান ও জিল্লুল হাকিম। সাবেক প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন মাহবুব আলী, মেহের আফরোজ চুমকি, এনামুর রহমান, নসরুল হামিদ ও শরীফ আহমেদ।
দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকার পরও যারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিল, তাদের বিরুদ্ধে এত দিন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দুদক।ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি
তালিকায় সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান, অসীম কুমার উকিল, মানু মজুমদার, সোলায়মান হক জোয়ার্দার, ইকবালুর রহিম, রণজিৎ কুমার রায়, শফিকুল ইসলাম (শিমুল), গোলাম ফারুক, নাঈমুর রহমান (দুর্জয়), এইচ এম ইব্রাহিম, মো. সাইফুজ্জামান (শিখর), রাশেদুল মিল্লাত, হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, শওকত হাচানুর রহমান, আবদুল আজিজ, আনোয়ারুল আশরাফ খান, দিদারুল আলম ও এইচ বি এম ইকবাল। এ তালিকায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেনের নামও রয়েছে। এ ছাড়া প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তমাল মনসুরের নামও রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের ওই তালিকায়।
দুদকের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের একটি নির্দেশনা রয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির আয়ের উৎস, আর্থিক লেনদেন, ভিন্ন নামে করা সম্পদের তথ্য যাচাই, বাসা ও কার্যালয়ে তল্লাশি করতে হয়। এই কাজটি ঠিকভাবে হচ্ছে না। এর কারণ অনুসন্ধানের কাজে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও অনেক ক্ষেত্রেই অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। এই অনুমতি দেওয়ার দায়িত্ব দুদক কমিশনের।
ওই তালিকায় সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন শাজাহান খান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, গাজী গোলাম দস্তগীর, আবদুর রহমান ও জিল্লুল হাকিম। সাবেক প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন মাহবুব আলী, মেহের আফরোজ চুমকি, এনামুর রহমান, নসরুল হামিদ ও শরীফ আহমেদ।
দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ, দুই কমিশনার মো. জহুরুল হক ও আছিয়া খাতুনসহ শীর্ষ পদগুলোতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বিভিন্ন সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে পরিবর্তন এসেছে। তবে দুদকের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
২৯ আগস্ট রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যালয়ে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। তাঁরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে সমন্বয়ক সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দুদককে বলেছি গত ১৬ বছর এই ফ্যাসিস্ট সরকার যাঁদের পছন্দ হয়নি, তাঁদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। কারও পরিবার নিয়ে সমস্যা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, কারও জমিজমা নিয়ে সমস্যা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আর যেন এমন না হয়, সেটাই বলেছি। আর যেন কোনো রাজনৈতিক দল মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করতে না পারে, সেই বিষয়টি বলেছি।’
দুদক বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচারের টাকায় সাইফুজ্জামান ও তাঁর পরিবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়েছেন, ফ্ল্যাট কিনেছেন। যুক্তরাজ্যে তাঁর ২০০ মিলিয়ন পাউন্ডের (৩ হাজার ১৪০ কোটি টাকা) সম্পদ রয়েছে বলেও দুদকের অনুসন্ধান চিঠিতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত ১৫০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির একটি প্রাথমিক তালিকা করেছে দুদক। তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এই তালিকার সবাই শেখ হাসিনার সরকারের বিভিন্ন আমলের প্রভাবশালী মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী।
এই তালিকা থেকে ১৫ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭৯ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। তাঁদের মধ্যে আগের তালিকায় থাকা ৩১ জনের অনেকেই রয়েছেন। শিগগিরই অন্যদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু হবে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দুদকের তৎপরতা নিয়ে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হয়। অনেকের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ থাকে। সেই অভিযোগগুলো প্রথমে গোয়েন্দা অনুসন্ধান করা হয়। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে সত্যতা পেলে দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান শুরু করে। সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে সেভাবেই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
তাঁদের কেউ কেউ টাকা পাচার করে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন ও কানাডায় একাধিক বাড়ি করেছেন-এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া কারও কারও বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের হাজার কোটি টাকা লোপাট, প্রভাব খাটিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দুদক সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন এমন ১৫ জনের নামে এরই মধ্যে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। ১৫ আগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এরপর ১৭ আগস্ট সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তিনজন সাবেক সংসদ সদস্যের (নিজাম উদ্দিন হাজারী, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও বেনজীর আহমেদ) বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়। সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে তাঁরা ২৪ হাজার কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
১৮ আগস্ট সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে দুদক বলেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা বিদেশে পাচার করেছেন। দুদক বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচারের টাকায় সাইফুজ্জামান ও তাঁর পরিবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়েছেন, ফ্ল্যাট কিনেছেন। যুক্তরাজ্যে তাঁর ২০০ মিলিয়ন পাউন্ডের (৩ হাজার ১৪০ কোটি টাকা) সম্পদ রয়েছে বলেও দুদকের অনুসন্ধান চিঠিতে বলা হয়েছে।
১৯ আগস্ট সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ ৪১ জন মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তালিকায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে হাছান মাহমুদ, আনিসুল হক, দীপু মনি, টিপু মুনশি, তাজুল ইসলাম, সাধন চন্দ্র মজুমদার, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, ইমরান আহমেদ, জাহিদ মালেক, দস্তগীর গাজী, মহিবুল হাসান চৌধুরী, নসরুল হামিদ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুর রহমান, জুনাইদ আহ্মেদ, ফরিদুল হক খান, জাকির হোসেন, কামাল আহমেদ মজুমদার, জাহিদ আহসান রাসেল।
দুদক সূত্র জানায়, ২২ আগস্ট সালমান এফ রহমান, নসরুল হামিদ ও জুনায়েদ আহ্মেদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সর্বশেষ ৪ সেপ্টেম্বর সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
২০ আগস্ট সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানসহ পাঁচজন সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী (পিয়ন) মো. জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদক সূত্র বলছে, জাহাঙ্গীরের নিজ নামে নোয়াখালীতে ২১ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর স্ত্রীর নামে তিন কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, ২২ আগস্ট সালমান এফ রহমান, নসরুল হামিদ ও জুনায়েদ আহ্মেদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সর্বশেষ ৪ সেপ্টেম্বর সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যসহ ৪১ জনের বিষয়ে দুদকের তৈরি করা নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দখলের অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ টাকা পাচার করে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন ও কানাডায় একাধিক বাড়ি করেছেন-এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া কারও কারও বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের হাজার কোটি টাকা লোপাট, প্রভাব খাটিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ও অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের বিষয়ে ১৮ আগস্ট অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।
দুদক সূত্র বলছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতি করে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন আছাদুজ্জামান মিয়া। আর হারুন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্ত্রীর নামে পাঁচ মিলিয়ন ডলারে একটি বাড়ি কিনেছেন। কিশোরগঞ্জে নিজ এলাকায় তাঁর ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় তাঁর একাধিক বাড়ি-ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে ২৫ আগস্ট থেকে কাজ শুরু করেছে দুদক।
সমালোচিত ও বিতর্কিত তিন ব্যবসায়ী এস আলম ও তাঁর পরিবার এবং নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে ১৫ আগস্ট অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এর আগে ২২ আগস্ট অনুসন্ধান শুরু হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর (এফ) রহমানের বিরুদ্ধে। তাঁদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
দুদকের একাধিক সূত্র বলছে, শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ ওই তিন ব্যবসায়ীর ইচ্ছায় দুদক অনেক ব্যবসায়ীকে হয়রানি করেছে। কারও কারও বিরুদ্ধে দুদককে দিয়ে মামলা করিয়েছে। যেমন এমজিএইচ গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনিস আহমেদের (গোর্কি) বিরুদ্ধে দুদকের মামলার নেপথ্যে ছিলেন সালমান এফ রহমান। একইভাবে একটি অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলার নেপথ্যে ছিলেন নাফিজ সরাফাত।
দুদক সূত্র বলছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতি করে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন আছাদুজ্জামান মিয়া। আর হারুন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্ত্রীর নামে পাঁচ মিলিয়ন ডলারে একটি বাড়ি কিনেছেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পটপরিবর্তনের পর দুদক যেভাবে সক্রিয়তা দেখাচ্ছে, এতে তারা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিচ্ছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে তাদের মূল বিবেচ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ক্ষমতায় আছেন কি নেই। দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্য দীর্ঘদিন থাকার পরও যারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিল, তাদের বিরুদ্ধে এত দিন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দুদক। তিনি বলেন, এখন এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান কতটুকু তার ম্যান্ডেট পালনে সৎসাহসের পরিচায়ক, আর কতুটুকু লোক দেখানো বা দীর্ঘদিনের নিষ্ক্রিয়তা ধামাচাপা দেওয়ার প্রয়াস, এই প্রশ্ন অবান্তর নয়। ক্ষমতাচ্যুত উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে চলমান সক্রিয়তার ফলাফল যা-ই হোক না কেন, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে প্রত্যাশিত মাত্রায় সাফল্য পেতে হলে দুদককে পুরোপুরি ঢেলে সাজানো ছাড়া উপায় নেই।