অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার সুরক্ষা আইন করতে যাচ্ছে। নতুন এই আইনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪’। সর্বসাধারণের মতামত চেয়ে খসড়াটি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বর্তমান আইনে থাকা বাক্স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিতর্কিত কিছু ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির ওয়েবসাইটে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে মতামত চাওয়া হয়েছে।
ব্যাপক সমালোচিত ও বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ রহিত করে গত বছরের সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগ সরকার সাইবার নিরাপত্তা ২০২৩ নামে একটি আইন পাস করে। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা ও অধিকারকর্মীরা এটিকে নতুন মোড়কে পুরোনো নিবর্তনমূলক ধারাসংবলিত আইন বলে অভিযোগ করে আসছিলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ৭ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
বর্তমান সরকারের করা সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের প্রাথমিক খসড়াটি ঘেঁটে দেখা যায়, এতে বিতর্কিত কয়েকটি ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। ধারাগুলো ছিল মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার দণ্ড; পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ; আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ; অনুমতি ব্যতীত পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার, ইত্যাদির দণ্ড; মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার ইত্যাদি।
তবে নতুন অধ্যাদেশের খসড়ায় রয়ে গেছে সাইবার স্পেসে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো তথ্য প্রকাশের দণ্ড। এর দায়ে অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অথবা উভয় দণ্ড। এখানে সাইবার স্পেসে সংজ্ঞা হিসেবে বলা হয়েছে, সব ধরনের ডিজিটাল নেটওয়ার্কগুলো ভার্চ্যুয়াল জগৎ। এ ছাড়া থাকছে পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তার, যা নিয়ে আগেও সমালোচনা ছিল।
এবারের খসড়ায় সাইবার স্পেসে জুয়া খেলার অপরাধ ও দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জুয়া খেলার জন্য কোনো অ্যাপস, ডিভাইস তৈরি বা খেলায় অংশগ্রহণ বা সহায়তা করেন এবং উৎসাহ দিতে বিজ্ঞাপনে অংশ নেন, তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
অপরাধের আওতায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে ব্ল্যাকমেইলিং (প্রতারণা) বা অশ্লীল বিষয়বস্তু প্রকাশ–সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ড। খসড়ায় যে কারও মামলা করার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সরাসরি সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তাঁর নিয়োগ করা ব্যক্তি অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বাদে অন্য কেউ এ আইনের অধীন মামলা করতে পারবেন না। আগের আইনে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা উৎসাহ নিয়ে মামলা করতেন, যা বেশির ভাগই ছিল প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের অবমাননার অভিযোগে।
তবে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তাঁর নিযুক্ত ব্যক্তি থানায় অভিযোগ গ্রহণের অনুরোধ করে ব্যর্থ হলে তিনি ট্রাইব্যুনালে লিখিত নালিশ করলে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগকারীকে পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেবেন। কিন্তু সন্তুষ্ট না হলে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ নাকচ করে দেবেন।
প্রকাশিত খসড়া অনুযায়ী, এ আইনের অধীনে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি ও কাউন্সিল গঠিত হবে।
অধ্যাদেশে আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য মামলার বিধান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো, কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম ইত্যাদির ক্ষতিসাধন ও দণ্ড, সাইবার স্পেসে প্রতারণা, সাইবার সন্ত্রাসী কার্য সংঘটনের অপরাধ ও দণ্ড ও হ্যাকিং–সংক্রান্ত অপরাধ উল্লেখযোগ্য। তবে ব্ল্যাকমেইলিং (প্রতারণা) বা অশ্লীল বিষয়বস্তু প্রকাশ–সংক্রান্ত অপরাধ যদি কোনো শিশুর বিরুদ্ধে হয়, তাহলে আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য হবে।
সাইবার নিরাপত্তা আইন রহিত হওয়ার পরও তার কিছু ধারার মামলার বিচার নতুন অধ্যাদেশেও চলবে। সেগুলো মূলত কম্পিউটারভিত্তিক অপরাধ ও ডিজিটাল প্রতারণা–সংক্রান্ত। অন্য মামলা বাতিল হয়ে যাবে।