ভারতে নির্বাচনের পর দিল্লি সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ।
মাতারবাড়ী নিয়ে জাপানকে যুক্ত করে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা।
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের পর দুই দেশের সুবিধাজনক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরে যাবেন।
ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে বৈঠকে বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সচিব বলেন, বৈঠকে তিস্তা প্রসঙ্গেও কথা হয়েছে। এ সময় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব তিস্তা প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখান।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রার সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানানো। অদূর ভবিষ্যতে এই সফর হবে।
ভারত ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের আমন্ত্রণ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দিল্লি সফর কবে হবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সফরটি শিগগিরই হবে। ভারতে এখন নির্বাচন চলছে। নির্বাচন শেষে সরকার গঠনের পর দুই দেশের সুবিধাজনক সময়ে সফরের আয়োজন করা হবে। সফরের সুনির্দিষ্ট সময় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠকের আগে বিনয় কোয়াত্রা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রধানমন্ত্রীর ভারত ও চীন সফর সম্পর্কে জানতে চান সাংবাদিকেরা। দুই দেশের মধ্যে কোন সফরটি আগে হবে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। তিনি কেবল বলেন, দিল্লি তো কাছে, বেইজিং একটু দূরে।
সন্ধ্যায় কূটনৈতিক সূত্রগুলো প্রথম আলোকে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পিত দিল্লি সফর নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলবে। এই সফর জুনের শেষ দিকে বা জুলাইয়ে করা যায় কি না, এমন বিকল্প নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা চলছে।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিস্তায় আমরা একটা বড় প্রকল্প নিয়েছি। ভারত সেখানে অর্থায়ন করতে চায়। আমরা বলেছি, তিস্তার প্রকল্পটি আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী হবে। তাতে আমাদের প্রয়োজন যেন পূরণ হয়।’
তিস্তায় চীনও অর্থায়ন করতে চাইছে, এমন প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত যে সহায়তা করতে চাইছে, তা নিয়েই আজ আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘ভারতে নতুন সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা আশাবাদ জানিয়েছি, তিস্তার যে চুক্তিটি তৈরি হয়ে আছে, সেটির বাস্তবায়ন হবে।’
তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব তাঁর সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে বিপুল পরিমাণ পণ্য ওঠানামার সুযোগ তৈরি হবে। সেটার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সেখানে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে যুক্ত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে নেপাল ও ভুটানকে সংযুক্ত করা যায়। যেহেতু প্রকল্পটি জাপানের বিগ বির অংশ, ভবিষ্যতে জাপানকে কীভাবে সম্পৃক্ত করতে পারি, সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। আমরা একটি ত্রিপক্ষীয় কাঠামোর বিষয় চিন্তা করতে পারি।’
সীমান্ত হত্যা নিয়ে বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করার ওপর আমরা গুরুত্বারোপ করেছি। তিনি (কোয়াত্রা) জানিয়েছেন, তাঁদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সেটি অনুসরণও করেন।’
একই বিষয়ে বাংলাদেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘সীমান্তে কয়েক মাসে বাংলাদেশের আট নাগরিক নিহত হয়েছেন। গত পরশু মারা গেছেন দুজন। এ নিয়ে আমরা আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি। সীমান্ত এলাকায় মারণাস্ত্র নয়, এমন অস্ত্রের ব্যবহারে জোর দিয়েছি।’
ভারতের প্রতিক্রিয়া কী ছিল জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সীমান্ত হত্যা যে বেড়েছে, ভারতও এ বিষয়ে একমত। কীভাবে সীমান্ত হত্যা দ্রুত কমানো যায়, সে ব্যাপারেও তারা সম্মত।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘ভারতীয় ভিসা আজ থেকে এক বছর আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো অনেক সমস্যা আছে। যাঁরা চিকিৎসা করাতে যান, তাঁরা সময়মতো ভিসা পান না বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আছে।’
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বৈঠকে জানিয়েছেন, ভারতীয় হাইকমিশনে জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। আরও লোক তাঁরা পাঠাবেন। আশা করা যায়, আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে দ্রুত ভিসা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।