বাতিল হওয়া আইনে ১৪ বছর কারাদণ্ডের মুখে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম
ফাইল ছবি

পুরস্কারপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যক্রম পরিচালনায় মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার লঙঘন হচ্ছে। গত সোমবার ট্রায়াল ওয়াচের এক প্রতিবেদনে এই অভিমত দেওয়া হয়েছে। ট্রায়াল ওয়াচ হলো ক্লুনি ফাউন্ডেশন ফর জাস্টিসের একটি উদ্যোগ।

ট্রায়াল ওয়াচ বলেছে, যে ফৌজদারি বিধানে শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তা বাতিল হয়েছে। তবে গত বছর বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।

২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট রমনা থানায় মামলাটি হয়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ‘উসকানিমূলক মিথ্যা’ প্রচারের অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ওই মামলায় শহিদুল আলমকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

মামলায় ১০৭ দিন কারাভোগের পর শহিদুল আলম একই বছরের ২০ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়। এ অবস্থায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে থাকা ওই মামলার তদন্ত কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শহিদুল আলম ২০১৯ সালের মার্চে রিট করেন। একই বছরের ১৪ মার্চ হাইকোর্ট রুল দিয়ে তদন্ত কার্যক্রমের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রিট খারিজ করে রায় দেন হাইকোর্ট।

ওই বছরই শহিদুল আলম টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন নির্বাচিত হন। ট্রায়াল ওয়াচ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, শহিদুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তি হল একটি ফেসবুক লাইভ ভিডিও, যেখানে তিনি ছাত্রদের বিক্ষোভ নিয়ে তোলা ছবি তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি আল–জাজিরাকে একটি টিভি সাক্ষাৎকার দেন তিনি, যেখানে তিনি বিক্ষোভের পেছনের সামাজিক-রাজনৈতিক উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করেন। এখন তিনি ১৪ বছর কারাদণ্ডের মুখে।

ট্রায়াল ওয়াচ আরও বলেছে, শহিদুল আলমের ফেসবুক লাইভ বা টিভি সাক্ষাৎকারে সহিংসতার ডাক দেওয়ার কোনো উপাদান ছিল না। তবুও তাঁর বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টিতে উসকানি ও প্ররোচনার মাধ্যমে ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য অনুপ্রাণিত করার অভিযোগ আনা হয়। এর আগে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা প্রয়োগ করে এক হাজার ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ধারা বাংলাদেশে ভিন্নমত দমনের প্রধান হাতিয়ার।  

ট্রায়াল ওয়াচ প্রতিবেদনে বলেছে, ওই ৫৭ ধারা যখন বাতিল করা হয় তখন শহিদুল আলমের মামলা তদন্তাধীন ছিল। সরকারের নিজের ভাষায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং জনসাধারণের নৈতিকতা এবং স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে ওই ধারা বাতিল করা হয়। এর ফলে শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে মামলার কোনো আইনি ভিত্তি নেই। তা সত্ত্বেও চার বছর পরও সরকার মামলাটি চালিয়ে যাচ্ছে।

ক্লুনি ফাউন্ডেশন ফর জাস্টিসের উদ্যোগ হিসেবে ট্রায়াল ওয়াচ বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকসহ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ফৌজদারি বিচার পর্যবেক্ষণ, অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ ব্যক্তিদের অধিকার এবং বৈষম্যমূলক আইন বাতিলের পক্ষে কাজ করে। ট্রায়াল ওয়াচ ২০২১ সাল থেকে শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করছে।

ট্রায়াল ওয়াচ দাবি করেছে, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির (আইসিসিপিআর) অধীনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত বাতিল বা বন্ধ করা উচিত। বাংলাদেশ এই চুক্তি অনুসমর্থন করেছে। শহীদুল আলমের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম আইনগত ভিত্তি ছাড়া বিচারের ক্ষেত্রে আইসিসিপিআরের নিয়মনীতি এবং মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষায় এই চুক্তিতে উল্লেখিত নিশ্চয়তার লঙ্ঘন হয়।