যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বভিত্তিক সমাধান ও সমন্বয়ের সুপারিশ।
দেশের ৪ কোটির বেশি মানুষের শরীরে যক্ষ্মার (টিবি) জীবাণু সুপ্ত অবস্থায় আছে। যক্ষ্মাবিষয়ক বেশ কিছু লক্ষ্যমাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অর্জন থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। কার্যকরভাবে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে বেসরকারি খাতের চিকিৎসকদের জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত করা জরুরি।
গতকাল রোববার রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সাসাকাওয়া মিলনায়তনে আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় সরকারি কর্মকর্তা, যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞ ও গবেষকেরা এসব কথা বলেন।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব শক্তিশালী করা বিষয়ক এই সভা যৌথভাবে আয়োজন করে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, আইসিডিডিআরবি ও স্টপ টিবি পার্টনারশিপ। সভায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, পেশাজীবী সংগঠন ও সংস্থার প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।
সভায় যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিভিত্তিক সমাধান ও সমন্বয়ের সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশে যক্ষ্মা নির্মূলের জন্য সব অংশগ্রহণকারীকে একসঙ্গে কাজ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
শুরুতে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কর্মসূচি ব্যবস্থাপক আফজালুর রহমান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, দেশের ৪ কোটি মানুষের শরীরে যক্ষ্মা সুপ্ত অবস্থায় আছে। দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ জীবনে কোনো না কোনো সময়ে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। অন্যদিকে দেশে যক্ষ্মায় আক্রান্ত ১৯ শতাংশ মানুষকে এখনো শনাক্ত করাই সম্ভব হচ্ছে না।
সভায় বলা হয়, দেশের ৬০ শতাংশ বেসরকারি হাসপাতাল, ৭০ শতাংশ বেসরকারি চিকিৎসক (যাঁরা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখেন) ও ৯০ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিহীন চিকিৎসক এখনো জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কাজের সঙ্গে যুক্ত নন। যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের পর এসব চিকিৎসক যদি রোগীকে জাতীয় কর্মসূচির সেবার সঙ্গে যুক্ত করতেন, তাহলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি সম্ভব ছিল।
সভায় একাধিক বিশেষজ্ঞ বলেন, সময় বেঁধে দেওয়া যক্ষ্মাবিষয়ক বেশ কিছু লক্ষ্যমাত্রার অর্জন থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। দেশ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় যক্ষ্মায় মৃত্যুহার কমাতে পারছে না।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ৭০ হাজারের বেশি চিকিৎসক বিএমএর সদস্য। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের কাজে এ চিকিৎসকদের কাজে লাগানোর সুযোগ আছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দেশকে যক্ষ্মামুক্ত করতে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেই চ্যালেঞ্জ জয় করতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইসিডিডিআরবি নানা গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) মাধ্যমে যক্ষ্মা শনাক্তকরণ এবং আলট্রা-পোর্টেবল এক্স-রে মেশিনসহ নানা প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন দেশজুড়ে কাজে লাগিয়ে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।’
আইসিডিডিআরবির যক্ষ্মাবিষয়ক পরামর্শক আজহারুল ইসলাম খান সভা পরিচালনা করেন।