স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে মার্কিন দূতাবাস ছেড়ে গেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ হারানো এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। আজ শুক্রবার বিকেলে তিনি স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সন্ধ্যার পরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দূতাবাস ছেড়ে যান তিনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন।
এমরানের স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে মার্কিন দূতাবাসে অবস্থানের খবর প্রকাশের পর গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে ছুটে যান। সেখানে থাকা সাংবাদিকেরা জানান, সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে দূতাবাসের বাইরে থেকে একটি গাড়ি আসে। সেই গাড়িতে পরিবারসহ দূতাবাস ছেড়ে যান এমরান।
রাত সাড়ে আটটার দিকে এমরান আহম্মদের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, বাসায় যাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে পুলিশ রয়েছে।
এমরান আহম্মদ বলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যে তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তাই মার্কিন দূতাবাসে গিয়েছিলেন। তবে তাঁর কোনো ক্ষতি হবে না, সে বিষয়ে আশ্বস্ত হয়ে বাসায় ফিরেছেন।
এমরান স্ত্রী–সন্তান নিয়ে দূতাবাসে যাওয়ার পর তাঁর বিষয়ে জানতে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয়। তখন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের কাছে আপনাদের জানানোর মতো কোনো তথ্য নেই।’
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে একটি বক্তব্য দিয়ে কয়েক দিন ধরে আলোচনায় আছেন এমরান আহম্মদ। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলাচিঠি (বিবৃতি) পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে শতাধিক নোবেলজয়ী রয়েছেন।
এ বিষয়ে গত সোমবার হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁর সম্মানহানি করা হচ্ছে এবং এটি বিচারিক হয়রানি।’ শতাধিক নোবেলজয়ীর ওই খোলাচিঠির বিপরীতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে, এমন দাবি করে এমরান আহম্মদ বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে কর্মরত সবাইকে এতে স্বাক্ষর করার জন্য নোটিশ করা হয়েছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করব না।’
এর পরদিন মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া) অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন ডিএজি (ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল)। তিনি যদি সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন, তাহলে তাঁকে হয় পদত্যাগ করে কথা বলা উচিত অথবা অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমতি নিয়ে কথা বলা উচিত। তিনি সেটি করেননি।’
এরপর গতকাল ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে এমরান আহম্মদকে অব্যাহতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আইমন্ত্রী আনিসুল হক আজ সকালে এমরান আহম্মদকে বরখাস্তের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
সন্ধ্যায় এমরান পরিবার নিয়ে মার্কিন দূতাবাসে অবস্থান নেওয়ার পর ডেইলি স্টারকে একটি খুদে বার্তা পাঠান। তাতে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি মার্কিন দূতাবাসে আজকে পুরো পরিবারসহ আশ্রয়ের জন্য বসে আছি। বাইরে পুলিশ। আজকে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে...। আমার ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে গত ৪-৫ দিন ধরে অনবরত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই সরকার ভালোবাসার প্রতিদান দেয় জেল দিয়ে। আমার আমেরিকার কোনো ভিসা নেই। স্রেফ ৩টা ব্যাগে এক কাপড়ে আমার ৩ মেয়েসহ কোনোক্রমে বাসা থেকে বের হয়ে এখানে বসে আছি। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।’