চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

প্রকল্প পরিচালককে মারধর

দরপত্রের তথ্য আগেই ফাঁস, দায় প্রকৌশল বিভাগের

তদন্ত প্রতিবেদন জমা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দরপত্র প্রক্রিয়ার গোপনীয়তা রক্ষা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারে ১০ সুপারিশ। 

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের দরপত্র চূড়ান্ত হওয়ার আগেই তথ্য জেনে যান ঠিকাদারেরা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হন তাঁরা, যার জের ধরে হামলা হয় প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানীর ওপর। তথ্য ফাঁস হওয়ার পেছনে প্রকৌশল বিভাগের লোকজনের দায় রয়েছে।

প্রকল্প পরিচালককে মারধরের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির সদস্যরা। কমিটির প্রধান ও সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানীকে গত ২৯ জানুয়ারি বিকেলে মারধর করেন এক দল ঠিকাদার। নগরের টাইগারপাসে অবস্থিত সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের চতুর্থ তলায় প্রকল্প পরিচালকের কক্ষে ঢুকে তাঁকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় ১০ জনের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর ১০ ঠিকাদারের ১২টি প্রতিষ্ঠানকে কালোতালিকাভুক্ত করেছে সিটি করপোরেশন।

প্রকল্প পরিচালককে মারধরের ঘটনায় দায়ী ১০ ঠিকাদার হচ্ছেন মাহমুদা বিল্ডার্স ও এস জে ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মুহাম্মদ সাহাব উদ্দিন, বাংলাদেশ ট্রেডার্সের সঞ্জয় ভৌমিক ওরফে কংকন, মাসুদ এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মদ ফেরদৌস, জয় ট্রেডার্সের সুভাষ মজুমদার, খান করপোরেশনের মো. হাবিব উল্লা খান, নাজিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের মো. নাজিম উদ্দিন, রাকিব এন্টারপ্রাইজের মো. নাজমুল হোসেন, ইফতেখার অ্যান্ড ব্রাদার্সের মো. ইউসুফ, জ্যোতি এন্টারপ্রাইজ ও দীপা এন্টারপ্রাইজের আশীষ কুমার দে এবং তানজিল এন্টারপ্রাইজের মো. আলমগীর।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার আগেই দরপত্র প্রক্রিয়ার গোপনীয় বিষয় ঠিকাদারদের কাছে ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে। প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেছেন, প্রকৌশল বিভাগ থেকে কেউ না কেউ এ গোপনীয় তথ্য সরবরাহ করেছেন, যা নিয়মবহির্ভূত। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক, প্রকল্প উপপরিচালক, প্রধান প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী, উপসহকারী প্রকৌশলী, কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহকারী সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ।

প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও ক্ষতিগ্রস্ত জিনিসপত্রের রসিদ তদন্ত কমিটির কাছে জমা দেননি বলেও উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারে প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম দেশের বাইরে থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশ করে প্রকল্প পরিচালককে মারধরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিটি করপোরেশনের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারে ১০টি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। সুপারিশগুলোর অন্যতম হচ্ছে দরপত্র প্রক্রিয়া চলাকালে ঠিকাদারেরা ও তাঁদের লোকজনের অফিস এলাকায় অপ্রয়োজনীয় অনুপ্রবেশ সংরক্ষিত করা, দরপত্র প্রক্রিয়া চলাকালে নিরাপত্তাব্যবস্থা স্বাভাবিকের চেয়ে জোরদার করা, প্রতিটি দরপত্র প্রক্রিয়ায় গোপনীয়তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নাম–পদবি সংরক্ষিত রাখা, বিকেল চারটার পর সিটি মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরের অনুমতি ছাড়া দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করা।

এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।