আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করেছেন ঢাকার ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান। তিনি বলেছেন, আইসিজেতে ফিলিস্তিনের পক্ষে বাংলাদেশ অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিকাব টক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডিকাব সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু।
ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্বকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আর কতকাল ফিলিস্তিনের জনগণ জিম্মি হিসেবে থাকবে?
বিশ্বে ফিলিস্তিনের জনগণকে রাষ্ট্রহীন নাগরিক উল্লেখ করে রামাদান বলেন, ‘নিজ ভূমে আমরা পরাধীন। আমাদের শরণার্থী জীবন যাপন করতে হয়। এত রক্তের দামে কেন আমাদের নিজেদের ভূমিকে রক্ষা করতে হবে? বিদ্যুৎ ছাড়া, পানি ছাড়া, খাদ্য ছাড়া, বাসস্থান ছাড়া আমাদের আর কত দিন থাকতে হবে? আর কত মূল্য দিতে হবে একটি ন্যায়বিচার পেতে? মুসলিম উম্মাহ কোথায়? বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের মানবিকতা কোথায়?’
গত ৩০ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এ ঘোষণার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সবার আগে ব্রিটেনের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল; কারণ, ফিলিস্তিনের সব সমস্যা ব্রিটিশ নীতির কারণে সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও তারা যেটি বলেছে, এটি একটি শুভ উদ্যোগ। তবে ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সহানুভূতি থেকে তারা এই স্বীকৃতি দিচ্ছে না। বরং তারা বৈশ্বিক সমর্থন হারাচ্ছে বলে এখন স্বীকৃতি দিতে চাইছে। ভুলে গেলে চলবে না, ব্রিটিশদের কারণেই আমাদের এ করুণ পরিণতি হয়েছে। কিন্তু সেলুকাস, ৭৫ বছর ধরে বেমালুম নিশ্চুপ।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বা তারও আগে দেশটির কোনো প্রেসিডেন্ট সঠিক উদ্যোগ নিলে দু-তিন বছরেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হতো বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত ইউসূফ এস ওয়াই রামাদান। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ফিলিস্তিন ইস্যুতে অঙ্গীকার রক্ষা করেননি, এমনটা দাবি করে তিনি বলেন, জো বাইডেন তাঁর ভোটের আগে ফিলিস্তিন ইস্যুতে যে ওয়াদা করেছিলেন, সে অনুযায়ী কাজ করলে ৭ অক্টোবরের ঘটনা ঘটত না। তবে অনেক দেরি হলেও তিনি এখন এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।
বাংলাদেশের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রামাদান বলেন, ‘আইসিজের সাম্প্রতিক রায় দীর্ঘ ৭৫ বছরের সংগ্রামের পর ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন হওয়ার আশাবাদের অনুভূতি দেয়। এগিয়ে যাওয়ার এটিই প্রথম ধাপ। আমরা এর ওপর ভিত্তি করে কাজ করতে পারি।’
আইসিজেতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা গণহত্যা মামলা করায় দেশটির প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইউসুফ রামাদান। আইসিজে ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। একই সঙ্গে নির্বিচার হামলায় বিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে মানবিক বিপর্যয় উত্তরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা এক মাসের মধ্যে জানাতে বলেছেন আদালত।
ইউসুফ রামাদান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ধীরে ধীরে ইসরায়েলকে পরিত্যাগ করছে, যারা এখন পর্যন্ত শুধু শক্তিশালী হওয়ার কারণে দায়মুক্তি ভোগ করে আসছে। ইসরায়েল শক্তিশালী হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন ইস্যুকে উপেক্ষা করে আসছে। ইসরায়েল আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কিন্তু এর পাশে দাঁড়ানো শক্তিশালী দেশগুলো তাদের রসদ জোগাচ্ছে।’
নিজের রাষ্ট্র না থাকা আবার থাকার পর সেখানে যেতে না পারা সবচেয়ে বেদনার উল্লেখ করে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি নিজও দেশে যেতে পারছি না।’ স্বাধীন ফিলিস্তিনে যেতে না পারলে বাংলাদেশেই থেকে যাওয়ার কথা জানান তিনি।