দেশজুড়ে চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া তাপপ্রবাহ চলছেই। এ মাসে এ তাপপ্রবাহ কমার তেমন সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদেরা। তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির জন্য হাপিত্যেশ করছে মানুষ। কিন্তু দেশজুড়ে টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা অন্তত এ মাসে নেই—এমনটাই ভাষ্য আবহাওয়া অধিদপ্তরের। আজ রোববারও দেশের বিভিন্ন স্থানে বয়ে যেতে পারে তাপপ্রবাহ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস তেমনই।
এরই মধ্যে আজ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলছে। এসব প্রতিষ্ঠান খোলার কথা ছিল ২১ এপ্রিল। কিন্তু তাপপ্রবাহের কারণে ছুটি এক সপ্তাহ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এ মাসের ঠিক প্রথম দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত টানা ২৭ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এটা ৭৬ বছরের রেকর্ড। এর আগে রাজশাহীতে ২০১০ সালে ২০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। তবে তা টানা ছিল না। গত বছর টানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।
এপ্রিলের বাকি দিনগুলোতে তাপপ্রবাহ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। হয়তো তাপমাত্রার কমবেশি হতে পারে; কিন্তু তাপ চলতেই থাকবে।আবহাওয়াবিদ মো. উমর ফারুক
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন শুক্রবার চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি। এটা ছিল চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
গতকাল রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিনের চেয়ে গতকাল রাজধানীর তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি কমেছে।
এপ্রিল দেশের উষ্ণ মাস। এ মাসে বরাবরই তাপমাত্রা বেশি থাকে। এ মাসের বৈশিষ্ট্য হলো প্রচণ্ড তাপ হবে, আবার বৃষ্টির ফলে তা কমে আসবে। আবার তাপ বাড়তে থাকবে। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেল।
এর আগে রাজশাহীতে ২০১০ সালে ২০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। তবে তা টানা ছিল না। গত বছর টানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।
আজও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির আবহাওয়াবিদ মো. উমর ফারুক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এপ্রিলের বাকি দিনগুলোতে তাপপ্রবাহ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। হয়তো তাপমাত্রার কমবেশি হতে পারে; কিন্তু তাপ চলতেই থাকবে।
এবার তাপপ্রবাহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এত এলাকাজুড়ে এত দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ চলেনি। এ পরিস্থিতি তুলে ধরে উমর ফারুক বলেন, দেখা গেছে বেশ কয়েক দিন ধরে দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকায় তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এটি আগে দেখা যায়নি।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন দেশের ৪৪টি স্টেশনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়। অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এসব স্টেশনের মধ্যে ৩৪টিতেই তাপপ্রবাহ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ছিল।
আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস থাকলেও সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে বেশি বৃষ্টির জন্য আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই, এমনটাই অভিমত আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদের।
আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন দেশের ৪৪টি স্টেশনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়। অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এসব স্টেশনের মধ্যে ৩৪টিতেই তাপপ্রবাহ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ছিল।
পবিত্র রমজান ও ঈদের ছুটি শেষ না হতেই প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে এক সপ্তাহ ছুটি দেওয়া হয়েছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। দীর্ঘ ছুটি শেষে আজ প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলছে।
তবে প্রচণ্ড দাবদাহ থাকায় কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে শিক্ষা বিভাগ। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাসের সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। এক পালায় (শিফটে) পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে। আর দুই পালার বিদ্যালয়গুলোর প্রথম পালা সকাল ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় পালা সকাল পৌনে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে।
তবে প্রাক্-প্রাথমিক শ্রেণির কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধই থাকবে। আর দাবদাহ সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অ্যাসেম্বলিও (প্রাত্যহিক সমাবেশ) বন্ধ থাকবে।
এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আগামী শনিবার থেকেও ক্লাস নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অর্থাৎ প্রাথমিকে শনিবার আগের মতোই সাপ্তাহিক ছুটি থাকছে।
মাউশির আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আজ থেকে খুললেও দাবদাহ সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে। শ্রেণি কার্যক্রমের যে অংশটুকু শ্রেণিকক্ষের বাইরে পরিচালিত হয়ে থাকে এবং সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসতে হয়, সেসব কার্যক্রম সীমিত থাকবে।
এক পালায় (শিফটে) পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে। আর দুই পালার বিদ্যালয়গুলোর প্রথম পালা সকাল ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় পালা সকাল পৌনে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে।