মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর হত্যাকারী ওসমান পরিবারের অস্ত্রধারীরা প্রকাশ্যে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছুড়লেও তাঁরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, গত ১৯ জুলাই শামীম ওসমান ও তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, শ্যালক তানভীর আহমেদ, বেয়াই ফয়েজ উদ্দিন লাভলু, আত্মীয়স্বজনসহ ২০০-৩০০ সশস্ত্র ক্যাডার প্রকাশ্যে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছুড়লেন, তাঁদের কেউ গ্রেপ্তার হলেন না। তাঁদের অনুগত বাহিনীর অনেকেই এখন বহাল তবিয়তে আছেন।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার মিলনায়তনের সামনে ত্বকী হত্যার ১৪০ মাস উপলক্ষে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচিতে রফিউর রাব্বি এ কথা বলেন। ত্বকী হত্যার পর থেকে ঘাতকদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলামের (কাজল) সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহার (জুয়েল) সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, খেলাঘরের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রথীন চক্রবর্তী, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সামাজিক সংগঠক সমমনার সভাপতি সালাহউদ্দিন আহমেদ, উপদেষ্টা দুলাল সাহা, সিপিবির শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুজয় রায় চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা নেত্রী রাশিদা বেগম প্রমুখ।
রফিউর রাব্বি বলেন, দেশের সব হত্যা, গুম, খুন, আয়নাঘরের দায় শেখ হাসিনার। ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন সংস্থা ও দলের মাফিয়াদের দিয়ে ১৫ বছর তিনি তা করিয়েছেন। শেখ হাসিনা সাড়ে ১১ বছর ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে দলের গডফাদারদের রক্ষা করেছেন। তাঁর দেশত্যাগের পর বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায় আবার আজ ত্বকী হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাঁরা জানেন না, ওসমান পরিবারের খুনি মাফিয়ারা দেশে আছেন, নাকি পালিয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্ব তা বের করা। তাঁদের আইনের আওতায় এনে সুবিচার নিশ্চিত করা। তাঁরা দেশ থেকে পালালে সেই দায়ও গোয়েন্দা সংস্থার।
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘শামীম ওসমান হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করলেও দুদক কখনো তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করেনি। অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশের আইনপ্রণেতা হলেও দুদক তা দেখে না। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে দুদকের টনক নড়ে। গত ১৯ জুলাই শামীম ওসমান ও তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, শ্যালক তানভীর আহমেদ, বেয়াই ফয়েজ উদ্দিন লাভলু, আত্মীয়স্বজনসহ ২০০-৩০০ সশস্ত্র ক্যাডার প্রকাশ্যে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছুড়লেন, তাঁদের কেউ গ্রেপ্তার হলেন না। তাঁদের অনুগত বাহিনীর অনেকেই বহাল তবিয়তে এখনো বিরাজ করছেন। তিনি বলেন, ত্বকী হত্যার পাশাপাশি সাগর-রুনি, তনু, বুলু, মিঠু ও ওসমান পরিবার দ্বারা নিহত সব হত্যা এবং গত জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার নির্দেশে গণহত্যার বিচার করতে হবে। এই সরকার সেই বিচার না করলে আগের মতো গণ–আদালত তৈরি করে চব্বিশের গণহত্যার বিচার আদায় করা হবে।’
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
২০১৪ সালের ৫ মার্চ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছেন। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সেই সংবাদ সম্মেলনের ২ মাস পর ৩ জুন শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর সব বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। সেই অভিযোগপত্র আর আদালতে পেশ করা হয়নি।