বন্যায় পানিবন্দী এক নারীর হাতে প্রথম আলো ট্রাষ্টের পক্ষ থেকে দেওয়া ত্রাণ তুলে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল দুপরে নোয়াখালী সদর উপজেলার কাদিরহানিফ ইউনিয়নের নিত্যনন্দপুর গ্রামে
বন্যায় পানিবন্দী এক নারীর হাতে প্রথম আলো ট্রাষ্টের পক্ষ থেকে দেওয়া ত্রাণ তুলে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল দুপরে নোয়াখালী সদর উপজেলার কাদিরহানিফ ইউনিয়নের নিত্যনন্দপুর গ্রামে

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগ

‘বিপদে পাশে দাঁড়ানোয় আমরা কৃতজ্ঞ’

ঘরে ঢুকেছে বন্যার পানি। পাঁচ দিন ধরে বের হতে পারেননি ঘর থেকে। দুদিন আগে খাবারও ফুরিয়ে যায়। প্রতিবেশীদের দেওয়া চিড়া–মুড়ি খেয়ে কোনোমতে দিন পার করছিলেন। এর মধ্যে গতকাল শনিবার দুপুরে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে হাজির হন প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা। ত্রাণসামগ্রী পেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন ৭৬ বছরের মো. মোস্তফা মিয়া। বললেন, ‘আল্লাহ আপনাদের ভালো করবে। কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি।’

মোস্তফা মিয়ার বাড়ি নোয়াখালী সদর উপজেলার পূর্ব লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গতকাল লক্ষ্মীনারায়ণপুরের ৭০টি ও পাশের নিত্যানন্দপুর গ্রামের ৩০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

ত্রাণ হাতে পেয়ে রিকশাচালক মো. ফারুক বলেন, পাঁচ দিন ধরে রিকশা চালাতে পারেন না। আয়রোজগার বন্ধ। হাতে টাকাপয়সাও নেই। প্রতিবেশী এক ব্যক্তির কাছ থেকে ধার করে কিছু টাকা নিয়ে সামান্য চাল কিনেছেন।

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গতকাল চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দুই ইউনিয়নে বন্যাদুর্গত ১৬৩ পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরা। ত্রাণসামগ্রী পেয়ে উপজেলার ১০ নম্বর সুন্দরপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছেনুয়ারা বেগম বললেন, ‘এত ভেতরে ত্রাণ দিতে কেউ আসেনি। আপনারা আসায় খুব খুশি হয়েছি।’

বৃহস্পতিবার থেকে গত তিন দিনে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের সহযোগিতায় নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

প্রথম আলো বন্ধুসভার ত্রাণ বিতরণ

বন্যার পানি ঢোকায় কয়েক দিন ধরে ঘরে আটকা লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার উত্তর চর কাদিরা গ্রামের রাবেয়া বেগম (৪০)। দুই সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। গতকাল হাঁটুপানি মাড়িয়ে রাবেয়ার পরিবারের সদস্যদের হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেন বন্ধুসভার সদস্যরা। রাবেয়ার দিনমজুর স্বামীর আয়রোজগার বন্ধ।

গতকাল রাবেয়ার মতো চর কাদিরা গ্রামের ১৫০ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ত্রাণসামগ্রী। রিয়াজ হোসেন (৬০) নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘এবারের বন্যায় আমার বাড়ি-ভিটা পানিতে ডুবে পুকুরে পরিণত হয়েছে। এই বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ানোয় আমরা কৃতজ্ঞ।’

এদিন বন্ধুসভার বন্ধুরা নিজেদের উদ্যোগে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১ হাজার ১০০ বন্যার্তের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।

কারা কত সহায়তা দিল

প্রথম আলো ট্রাস্টের সহায়তায় বন্ধুসভার মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে। গতকাল প্রথম আলোর কর্মীদের এক দিনের মোট বেতন ১৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ তহবিলে জমা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত এই তহবিলে আইডিএলসি ফাইন্যান্স ৫ লাখ টাকা, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ৩ লাখ টাকা, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি ১ লাখ টাকা, আসাফুর রাহমান ৫০ হাজার টাকা, মুন্নু জাহান নামের একজন ৯ হাজার ৫০০ টাকা, বিকাশের মাধ্যমে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬৮৪ টাকা জমা হয়েছে।

এ ছাড়া বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য ১০০ শাড়ি, ১০০ লুঙ্গি, খাওয়ার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ৫৫ কেজি ফিটকিরি প্রথম আলো ট্রাস্টকে অনুদান দিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান।

বন্যার্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ ত্রাণ তহবিল। হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক পিএলসি, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।

অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।