ফিটনেসবিহীন এমন যানবাহন চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে
ফিটনেসবিহীন এমন যানবাহন চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে

চট্টগ্রামে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ৫ বছরে দ্বিগুণ

চট্টগ্রামে চলতি বছরের ৯ মাসে ১ হাজার ৪৮টি দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

চলতি বছরের ২২ এপ্রিল বিকেলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জিয়ানগর এলাকায় একটি বাসের ধাক্কায় নিহত হন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী। ৪৩ বছরের পুরোনো বাসটির ফিটনেস সনদ ছিল না। ভাঙাচোরা গাড়িটি কিনে কিছু মেরামতকাজ করিয়ে সড়কে নামিয়ে দেওয়া হয়।

২৩ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাক খাবারের দোকানে উঠে যায়। এতে একজনের মৃত্যু হয়। আহত হন ১৫ জন। ওই ট্রাকেরও ফিটনেস সনদ ছিল না।

শুধু এই দুটি নয়, চট্টগ্রাম জেলায় ৭৬ হাজার ৩২০টি যানবাহনের ফিটনেস সনদ নেই, যার ২০২০ সালে ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল ৩৭ হাজার ৩২৪টি—এ হিসাব বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম কার্যালয়ের। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে লক্কড়ঝক্কড় এসব যান দফায় দফায় মেরামত করিয়ে সড়কে চালাচ্ছেন পরিবহনের মালিকেরা। এতে যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগে ৯ মাসে ১ হাজার ৪৮টি দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ) চট্টগ্রামের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম শহর ও জেলায় চলাচলকারী মোট নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩৮৯। এর মধ্যে শহরে (মেট্রো এলাকা) ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৩ ও জেলায় ৬৯ হাজার ৯৪৬। নিবন্ধিত যানবাহনের মধ্যে শহরের ৪৬ হাজার ৭০৫ ও জেলায় ২৯ হাজার ৬১৫টি যানের ফিটনেস সনদ নেই।

সনদ না থাকা যানবাহনের মধ্যে রয়েছে বাস, মিনিবাস, ট্রাক, মিনিট্রাক, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা। কোনো যানবাহনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ১০ বছর আগে, কোনোটির মেয়াদ শেষ ৫ বছর আগে।

সড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিষয়ে বিআরটিএ চট্টগ্রামের উপপরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ধরনের যানবাহন পেলেই জব্দ করা হচ্ছে। তবে এক মাস ধরে ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না।

বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানান, হালকা, মাঝারি ও ভারী—এ তিন রকমের যানবাহনের জন্য আলাদা ফি নিয়ে সনদপত্র ইস্যু করে কর্তৃপক্ষ। এক বছরের জন্য এই সনদ দেওয়া হয়। যানবাহন অনুযায়ী সনদ নিতে ২৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। ৭৬ হাজার যানবাহন ফিটনেস সনদ না নেওয়ায় চলতি বছর অন্তত ১০ কোটি টাকা করে রাজস্ব হারিয়েছে বিআরটিএ।

দুর্ঘটনা থামছে না

চট্টগ্রামের সড়কে দুর্ঘটনার হিসাব রাখে বিআরটিএ। তাদের হিসাবে গত বছরের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ৩৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। এতে মারা গেছেন ২৭৯ জন। আহত হয়েছেন ৬৫২ জন। একই সময়ে চট্টগ্রাম মেট্রোতে দুর্ঘটনার সংখ্যা ১০৮। মারা গেছেন ৮৪ জন, আহত ১০৮। জুনের পর বিআরটিএ হিসাব হালনাগাদ করেনি।

অন্যদিকে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তৈরি করেছে। এতে দেখা গেছে, গত ৯ মাসে এই বিভাগে ১ হাজার ৪৮টি দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ফিটনেসবিহীন যানবাহন সড়কে চলাচল করলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে বলে জানিয়েছেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল ও এ জন্য দুর্ঘটনার জন্য বিআরটিএর দায় নিতে হবে। ধাপে ধাপে এসব যানবাহন সড়ক থেকে তুলে নিতে হবে।