রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের ‘চাঁদাবাজি ও আসন-বাণিজ্য’ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় শিক্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন নুসরাত জাহান নামের এক ছাত্রী। তাঁর অভিযোগ, জিজ্ঞাসাবাদের সময় কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে আটকে রেখে কয়েকজন শিক্ষক তাঁকে হেনস্তা করেছেন। যদিও নুসরাতের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য।
নুসরাত জাহান ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি। তিনি ইডেন কলেজের মার্কেটিং বিভাগে স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত। নুসরাতের ভাষ্য, গতকাল সোমবার দুপুরে একাডেমিক সনদ উত্তোলনের জন্য কলেজে গেলে বেলা একটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তাঁকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়।
এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে একটি কর্মসূচির আয়োজন করে ছাত্র অধিকার পরিষদ। ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের হাতে ‘শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি, হুমকি, সিট-বাণিজ্য ও নির্যাতনের’ প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ওই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচিতে নুসরাত জাহান বলেন, ২০১৭ সালে তিনি ছাত্রলীগের এক নেত্রীকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে ইডেনের ছাত্রীনিবাসে উঠেছিলেন। সেখানে তাঁকে মেঝেতে ঘুমাতে হতো। এক কক্ষে তাঁরা ১২ থেকে ১৩ জন ছিলেন। খারাপ পরিস্থিতি ও নির্যাতনের কারণে তিনি ছাত্রীনিবাসে টিকতে পারেননি।
নুসরাত জাহান আরও বলেন, ‘পরে শিক্ষকদের মাধ্যমে যোগাযোগ করে আমি একটি লিগ্যাল (বৈধ) সিটে উঠলেও সেখানে থাকতে পারছি না। সেখানেও তারা (ছাত্রলীগ) মেয়েদের ওপর নির্যাতন করে। ছাত্রীদের খারাপ ভিডিও ধারণ করে তারা বলে, সিট ছেড়ে না দিলে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে।’
এরপর গতকাল সনদ উত্তোলনের জন্য ইডেন কলেজে যান নুসরাত। একপর্যায়ে শিক্ষকেরা তাঁকে অধ্যক্ষের কক্ষে নিয়ে যান। নুসরাত বলেন, ‘অধ্যক্ষের কক্ষে থাকা ৩০ জনের বেশি শিক্ষক মিলে আমাকে নানাভাবে হেনস্তা করেন। হুমকি দিয়ে ২৬ সেপ্টেম্বরের বক্তব্যের বিষয়ে আমার কাছ থেকে জোর করে লিখিতও নেন।’
হেনস্তার একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানান নুসরাত। তিনি বলেন, ‘তখন তাঁরা আমার বাবাকে ফোন করে কলেজে এসে আমাকে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু মা–বাবা গ্রামে থাকায় স্থানীয় অভিভাবককে ডেকে মুচলেকা নিয়ে আমাকে ছাড়া হয়। এর আগেও আমাকে ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।’
তবে হেনস্তার অভিযোগ মানতে নারাজ ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সে (নুসরাত) আগে (২৬ সেপ্টেম্বর) যে বক্তব্য দিয়েছে, সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সে যেসব অভিযোগ করেছে, তাকে তার তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে বলা হয়। সত্যটা জানার জন্যই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু সে কাকে টাকা দিয়ে হলে উঠেছে, তা-ও বলতে পারেনি। কোনো তথ্যপ্রমাণও দিতে পারেনি।’
অধ্যক্ষ বলেন, ‘বিভিন্ন বিভাগের প্রধানেরা তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। প্রশ্ন করা কি হেনস্তা? ইডেন কলেজের প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার বক্তব্যে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এ জন্য তাকে দুঃখ প্রকাশ করতে বলা হলেও সে তা করেনি। কোনো মুচলেকাও রাখা হয়নি।’