ইপিআইয়ের অনুরোধে কোল্ড রুম এনেছে ইউনিসেফ। পাওয়ার পর ব্যবহারে উদ্যোগী নয় প্রতিষ্ঠানটি।
সাতটি জেলায় টিকা সংরক্ষণের মূল্যবান সামগ্রী পড়ে আছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) কর্মকর্তাদের অলসতায় ‘ওয়াক-ইন-কোল্ড রুম’ নামের এই সামগ্রী স্থাপন করা হচ্ছে না। পড়ে থাকায় এগুলো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
টিকাবিষয়ক বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্যাভির আর্থিক সহায়তায় এই সাতটি ওয়াক-ইন-কোল্ড রুম বাংলাদেশকে সরবরাহ করেছে ইউনিসেফ। ফেনী, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, রাজবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও পিরোজপুর—এই সাত জেলায় একটি করে কোল্ড রুম পাঠানো হয়েছে গত এপ্রিলে। কিন্তু সেগুলো স্থাপন বা ইনস্টল করা হয়নি।
বাংলাদেশের জন্য দেওয়া গ্যাভির টিকা ফ্রিজগুলো কেন ব্যবহার করা হচ্ছে না, ফেলে রেখে নষ্ট করা হচ্ছে, এর পেছনে কোনো দুরভিসন্ধি বা গাফিলতি আছে কি না, তা অনুসন্ধান করে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা প্রয়োজন।কাজী সাইফউদ্দীন বেননূর, আহ্বায়ক, সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ ফোরাম
কোল্ড রুম টিকা সংরক্ষণের জন্য বড় আকারের একটি সামগ্রী। বলা যায়, বড় আকারের রেফ্রিজারেটর। এর মধ্যে একসঙ্গে ১০ লাখ টিকা রাখা যায়। তাপনিয়ন্ত্রণের বিশেষ ব্যবস্থা আছে। এর সঙ্গে বেশ কিছু স্পর্শকাতর সূক্ষ্ম যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আছে। প্রশিক্ষিত যন্ত্রবিদ বা প্রকৌশলীরা ‘ওয়াক-ইন-কোল্ড রুম’ স্থাপন করেন। জেলা পর্যায়ে এ ধরনের প্রকৌশলী নেই। সাধারণত ইপিআইয়ের ঢাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রকৌশলী গিয়ে এ ধরনের সামগ্রী বা যন্ত্র স্থাপন করে দেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন এস এম মাহমুদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা স্থানীয়ভাবে কোল্ড রুম স্থাপন করতে পারব না, সেই সক্ষমতা নেই। এর জন্য ঢাকা থেকে ইঞ্জিনিয়ার আসতে হবে।’ ফেনীর সিভিল সার্জন জানেন না ঠিক কোন কারণে তাঁর জেলায় কোল্ড রুম স্থাপন করা হয়নি।
ইপিআইয়ের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক শাহাবুদ্দিন ৮ নভেম্বর প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মনে করতে পারেন না ঠিক কোন কারণে কোল্ড রুমগুলো স্থাপন করা হয়নি। জানার পর তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
ইপিআই ও দাতাদের সূত্রে জানা গেছে, ইপিআই ২০২৩ সালে টিকার ব্যাপারে সহায়তা করার জন্য ইউনিসেফকে অনুরোধ জানায়। তারা সাতটি জেলায় অবকাঠামো নির্মাণ, অবকাঠামো সংস্কারসহ সাতটি কোল্ড রুম স্থাপনের কথা বলে। ইউনিসেফ গ্যাভির আর্থিক সহায়তায় তিনটি জেলায় নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করে ও বাকি চারটি জেলায় সংস্কার করে। পাশাপাশি ফিনল্যান্ড থেকে সাতটি কোল্ড রুম আনা হয়। প্রতিটি কোল্ড রুমের জন্য খরচ হয় ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এগুলো এ বছর মার্চে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় এবং এপ্রিলে সাতটি জেলায় তা পৌঁছে যায়। কিন্তু এর পর থেকে সেগুলো পড়ে আছে। এর মধ্যে ইউনিসেফের পক্ষ থেকে এগুলো স্থাপন করার জন্য একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে ইপিআই কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু ইপিআই কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ইউনিসেফের চিঠির কথাও মনে করতে পারেননি ইপিআইয়ের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যন্ত্র কেনার পর সেগুলো পড়ে থাকার বহু নজির আছে। ঠিক সময়ে বাক্স না খোলায় যন্ত্র ব্যবহারের উপযোগী থাকে না। অনেক সময় ‘ওয়ারেন্টি পিরিয়ড’ শেষ হয়ে যায়। স্বাস্থ্য খাতে এ ধরনের অবহেলা, অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এ ব্যাপারে নাগরিক সংগঠন সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ ফোরামের আহ্বায়ক কাজী সাইফউদ্দীন বেননূর প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের জন্য দেওয়া গ্যাভির টিকা ফ্রিজগুলো (ওয়াক-ইন-কোল্ড রুম) কেন ব্যবহার করা হচ্ছে না, ফেলে রেখে নষ্ট করা হচ্ছে, এর পেছনে কোনো দুরভিসন্ধি বা গাফিলতি আছে কি না, তা অনুসন্ধান করে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা প্রয়োজন। কেউ যদি দায়ী হয়ে থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এগুলোকে এখনই সক্রিয় করে কাজে লাগাতে হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ফেনী]