ছয় কারা কর্মকর্তার পদোন্নতি–সংক্রান্ত সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নে দেরির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী ও কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ সোমবার তাঁদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন।
আদালত অবমাননার অভিযোগে করা পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ নভেম্বর আপিল বিভাগ পদোন্নতি–সংক্রান্ত রায় বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শক ৪ ডিসেম্বর আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ তাঁরা সকালে আদালতে হাজির হন।
আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে অংশ নেন। অবমাননার অভিযোগকারীদের পক্ষে আইনজীবী ইব্রাহীম খলিল এবং সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী সফিকুল ইসলাম।
আবেদনকারীদের আইনজীবীর তথ্যমতে, ছয় কর্মকর্তা ২০০৮ সালে জেল সুপারের চলতি দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৮৪ সালের নিয়োগবিধি অনুসারে পূর্ণ নিয়োগ পেতে তথা পদোন্নতির জন্য ২০১৬ সালে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বিফল হন। এ নিয়ে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে তাঁদের পক্ষে রায় পান। এর বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ আপিল ট্রাইব্যুনালে গেলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। এর বিরুদ্ধে তাঁরা আপিল বিভাগে আপিল করেন, যা ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল খারিজ হয়। আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ছয় কর্মকর্তা ২০১৯ সালে ছয়টি আবেদন (রিভিউ) করেন।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, পদোন্নতি নিয়ে ছয় কারা কর্মকর্তার (জেল সুপার) করা পুনর্বিবেচনার আবেদনের (রিভিউ) ওপর গত বছরের ৭ এপ্রিল আপিল বিভাগ রায় দেন। রায়ে ১৯৮৪ সালের অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফ (ডিপার্টমেন্ট অব প্রিজন্স) রিক্রুটমেন্ট বিধিমালার আলোকে দ্রুত আবেদনকারীদের (ছয় জেল সুপার, চলতি দায়িত্ব) পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনা করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগে পদোন্নতিপ্রত্যাশী মো. নুরুন্নবী ভূঁইয়াসহ পাঁচ কর্মকর্তা গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর পৃথক পাঁচটি আবেদন করেন।
কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষের আইনজীবী সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ছয় কারা কর্মকর্তাকে জেল সুপার পদে পদোন্নতি দিয়ে ২০০৮ সাল থেকে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেখিয়ে গত ২৯ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। পদোন্নতি–সংক্রান্ত সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নে দেরির জন্য সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শক নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তাঁদের ব্যক্তিগত উপস্থিতি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
আবেদনকারীদের আইনজীবী ইব্রাহীম খলিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপিল বিভাগের গত বছরের ৭ এপ্রিল দেওয়া ওই রায়ে ১৯৮৪ সালের অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফ (ডিপার্টমেন্ট অব প্রিজন্স) রিক্রুটমেন্ট বিধিমালার আলোকে দ্রুত আবেদনকারীদের (ছয় জেল সুপার, চলতি দায়িত্ব) পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়েছিল। এ অনুসারে পদোন্নতি পেয়ে তাদের পরবর্তী উচ্চতর পদে (কারা উপমহাপরিদর্শক) থাকার কথা। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।’