বাড়িতে মা অসুস্থ—এ খবর শুনে ১৯ জুলাই শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে বের হন ফিরোজ তালুকদার ওরফে পলাশ (৩৮)। পথে মিরপুরে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন তিনি। সেখানে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। ওই রাতেই ফিরোজ মায়ের কাছে আসেন, তবে মৃত অবস্থায়।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা সদরের ঘাটান্দি গ্রামে ফিরোজদের বাড়ি। তাঁর বাবার নাম সোহরাব তালুকদার। তিনি গত মার্চে মারা গেছেন। ফিরোজ ঢাকার মিরপুরে একটি কেমিক্যাল কোম্পানিতে অফিস সহায়ক পদে চাকরি করতেন। ঢাকাতেই থাকতেন স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে।
গতকাল মঙ্গলবার ফিরোজদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মা হোসনে আরা বেনু ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছেন। মাটির মেঝে, টিনের ঘরটির সামনে গিয়ে পরিচয় দিতেই তিনি দরজার কাছে আসেন। সঙ্গে ছেলের ছবিও নিয়ে আসেন। আঁচল দিয়ে ছবিটি মুছতে মুছতে বলেন, ‘আমার বাবা আমার অসুখের কথা শুইনা বাড়িতে রওনা হইছিল। বাবা বাড়িতে আইলো ঠিকই, কিন্তু জীবিত আইলো না। আমার বাবা কোনো দোষ করছিল না। তারে কী জন্য গুলি কইরা মারল?’ এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
হোসনে আরার দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ফিরোজ ছিলেন বড়। তাঁর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ইসরাত জাহান ওরফে সাবিনা বলেন, ঘটনার দিন সকালে ফোন দেওয়ার পর মায়ের অসুস্থতার কথা জানতে পারেন ফিরোজ। তারপর বিকেল পর্যন্ত মা ও স্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে কথা হয়। তখন জানিয়েছিলেন সংঘর্ষ চলছে, গাড়ি পাচ্ছেন না। সন্ধ্যার আগে ফিরোজকে তাঁর স্ত্রী কল দেন, কিন্তু কল ধরেননি।
সন্ধ্যার পর ফিরোজের ফোন থেকে তাঁর মাকে কল দেওয়া হয়। অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোনে বলেন, ফিরোজ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। মরদেহ মিরপুর আলোক হাসপাতালে আছে। পরে এ তথ্য জেনে স্ত্রী ওই হাসপাতালে গিয়ে ফিরোজের লাশ শনাক্ত করেন।
১৯ জুলাই দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ফিরোজের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। পরদিন সকালে ঘাটান্দি গ্রামে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। দুই দিন পর ফিরোজের স্ত্রী রেশমা আক্তার মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় চলে গেছেন।
এদিকে ছেলে হারানোর শোক এবং ছেলের বউ ও নাতনির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পাগলপ্রায় হোসনে আরা। তিনি বলেন, ‘ছেলে মারা যাওয়ার পর কত মানুষ আইতাছে। কত সান্ত্বনা দিতাছে। কিন্তু কেউ আমার বাবারে তো ফিরায়ে দিবার পারব না। কীভাবে দিন চলব আমার ছেলের বউ আর নাতনির? অগোরে সামনে এহন অন্ধকার।’