সরকার পতনের পর সহিংসতায় এ পর্যন্ত ২৩২ জনের মৃত্যু

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, সহিংসতা ও সংঘাতের ঘটনায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত আরও ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের বেশির ভাগই মারা গেছেন গত মঙ্গলবার। কেউ কেউ মারা গেছেন চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

গত সোমবার থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ২৩২ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। এর আগে কোটা আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সংঘাতে ৩২৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। গত ২৩ দিনে সারা দেশে মোট ৫৬০ জন নিহত হয়েছেন।

ঢাকার সাভারে সোমবারের সংঘাতে চিকিৎসাধীন আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে গতকাল। আর আগের দিন মঙ্গলবার গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে বন্দীরা পালানোর সময় কারারক্ষীদের গুলিতে ছয়জন মারা যান। সোমবারের সংঘাতে আরও ১০ জনের লাশ এসেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে।

মেহেরপুরের গাংনীতে আনন্দমিছিল নিয়ে বাড়িতে হামলার সময় সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত সাতজন। ঘটনাটি গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের বাওট গ্রামে ঘটে। নিহত নাহারুল ইসলাম বাওট গ্রামের কামরুল বিশ্বাসের ছেলে। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে মেন্দিপুর গ্রামে উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য শেফায়েত উল্লাহ ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি তোফাজ্জল হোসেনের পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম জহিরুল্লাহ (৫০)। তিনি উপজেলার মেন্দিপুর গ্রামের সাহু মিয়ার ছেলে।

সোমবারের সংঘাতে আরও ১০ জনের লাশ এসেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে। এর মধ্যে ছয়জন পুলিশ সদস্য ও একজন আনসার সদস্য রয়েছেন। নিহত ছয় পুলিশ সদস্যের মধ্যে এসআই সুজন চন্দ্র দে (৪২), সহকারী এএসআই ফিরোজ হোসেন (৪২) ও কনস্টেবল রেজাউল করিমের (৪৮) লাশ আনা হয় যাত্রাবাড়ী থেকে। তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়। উত্তরা পূর্ব থানা এলাকা থেকে আনা হয় এসআই খগেন্দ্র চন্দ্র সরকার (৪৯) ও কনস্টেবল শহিদুল আলমের (৪৮) লাশ। আশুলিয়া থেকে আনা হয় এএসআই রাজু আহমেদের (৩০) লাশ। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী থেকে আনসার সদস্য আবু জাফরের (৪৩) গুলিবিদ্ধ লাশ আনা হয়। এর বাইরে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল থেকে পারভেজ মিয়ার (৩০) গুলিবিদ্ধ লাশ, সাভার থেকে পোশাক কর্মী সুমন ইসলামের (৩০) লাশ এবং উত্তরা পূর্ব থানা এলাকা থেকে আবু হাসনাতের (২৪) লাশ আনা হয়।

ঢাকার সাভারে গত সোমবার আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আরও তিনজনের নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গতকাল দুপুর পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা হলো ৩৪। সাভারের বিভিন্ন হাসপাতাল ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে ২০৯ জন বন্দী পালিয়ে গেছেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে এই বন্দী পালানো ঠেকাতে গুলি ছোড়েন কারারক্ষীরা। এতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন জঙ্গি রয়েছেন বলে কারাগার সূত্রে জানা গেছে।