‘গতানুগতিক ধারার বাইরে এটি একটি আধুনিক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। কারণ, আমাদের এখানে রোবোটিক ক্লাব, ইনক্লুসিভ লার্নিং সেল, সুবিশাল অ্যালামনাই নেটওয়ার্কসহ এমন কিছু সৃজনশীল আয়োজন আছে, যা বাংলাদেশের কোনো পলিটেকনিকে নেই’, বলছিলেন ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ কে এম হাসান।
বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও দক্ষ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার গড়ে তোলা এবং মানসম্মত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০০৬ সালে ড্যাফোডিল পরিবারের কর্ণধার ড. মো. সবুর খান প্রতিষ্ঠা করেন সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট’। রাজধানীর ধানমন্ডির কোলাহলমুক্ত মনোরম পরিবেশে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।
গত ১৮ বছরে শিক্ষাদান করে আসা প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ৯টি বিভাগ। সেগুলো হলো কম্পিউটার সায়েন্স, গ্রাফিকস ডিজাইন, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল, আর্কিটেকচার, টেলিকমিউনিকেশন, টেক্সটাইল, অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ও ইলেকট্রনিকস। বিভাগগুলোয় পড়ছেন মোট এক হাজার তিন শ শিক্ষার্থী। তাঁদের যত্নসহকারে পাঠদান করছেন ৫৭ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভবন ও শীতাতপনিয়ন্ত্রিত শ্রেণিকক্ষে চলে পাঠদান কার্যক্রম।
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে রয়েছে সব বিভাগের ইনোভেশন ল্যাব ও লাইব্রেরি এবং শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য ফ্রি ল্যাপটপের সুবিধা। মূলধারার বাইরে গিয়ে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিত্যনতুন শিক্ষা উপকরণ সংযোজন এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি নিশ্চিত করে। এ ছাড়া রয়েছে নিয়মিত মাসিক ও অন্যান্য পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা, শ্রেণিশিক্ষকের পাশাপাশি গাইড-শিক্ষক সুবিধা, মাসিক উপবৃত্তি, অমনোযোগী ও তুলনামূলক দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা। আর ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ৫০ শতাংশ শিক্ষাবৃত্তি।
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ কে এম হাসান বলেন, ‘আমরা নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করি। আমরা অতীত যেমন বিবেচনায় রাখি, তেমনি ১০ বছর পর বিশ্ব কোথায় থাকবে—সে বিবেচনায় আমাদের শিক্ষার্থীদের তৈরি করার চিন্তা করি। তাই আগামী দিনের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম ও কর্মদক্ষ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারই আমরা তৈরি করতে চাই।’
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের জন্য বরাবরই ক্যারিয়ারবান্ধব পাঠদানের ব্যাপারে যত্নবান। তাই কারিগরি শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলো নিয়ে নির্দিষ্ট সময় পরপর ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য ‘প্রজেক্ট ফেস্ট’। এসব প্রদর্শনীতে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেন। শুধু প্রজেক্ট ফেস্টই নয়, ‘জব ফেয়ারে’র মতো নানা উদ্যোগে মুখর থাকে আঙিনা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা এই ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় আয়োজন করে থাকে ‘অন স্পট ইন্টারভিউ’ ক্যাম্পেইন। শিক্ষার্থীদের সপ্তম সেমিস্টার শেষে ইন্টার্নশিপের জন্য এবং পড়াশোনা শেষে চাকরির সুযোগ দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ড্যাফোডিল পলিটেকনিকের কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া ক্যারিয়ার সচেতনতায় আয়োজন করা হয় ‘ক্যারিয়ার গাইডলাইন সেমিনার’ এবং জীবনমুখী দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ‘আর্ট অব লিভিং’, যা শিক্ষার্থীদের সামাজিক শিষ্টাচারবিষয়ক জ্ঞান বৃদ্ধি করে। এই পলিটেকনিকের অনন্য দিক হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনাকালে নিজস্ব দক্ষতায় নিজ ক্যাম্পাসেই ‘পার্টটাইম’ চাকরির সুবিধা। ক্যারিয়ারবিষয়ক সামগ্রিক এ বিষয়গুলো দেখাশোনা করে ‘ক্যারিয়ার লঞ্চপেড’ বিভাগ। এর ফোকাল পারসন মো. আশিকুর রহমান তাঁর অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব একটি টিম আছে, যারা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা যাচাই করে এবং ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য মানানসই চাকরির ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।’
এমন বুদ্ধিভিত্তিক উদ্যোগের ফলে ড্যাফোডিল পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। এই ইনস্টিটিউটের মোট উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর ৭৭ শতাংশ দেশের ৩৬৮টি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন। এর মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, তিতাস গ্যাস উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া দেশের বাইরে ২৮টি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত আছেন এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রাপ্ত সূত্রমতে, করোনার সময় দেশের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ড্যাফোডিল পলিটেকনিকই প্রথম অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছিল। এ ছাড়া আইসিটির প্রতি দেওয়া হয় বিশেষ গুরুত্ব; যার ধারাবাহিকতায় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (সিএসই) শিক্ষার্থীদের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) ওপর ক্লাস এবং গ্রাফিকসের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘থ্রিডি প্রিন্টার ওয়ার্কশপ’–এর মতো বিভাগভিত্তিক নানা উদ্যোগ রয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘এলএমএস’-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাঁদের পড়াশোনায় বিভিন্নভাবে সহযোগিতা পাচ্ছেন। তাই কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভবিষ্যতের জন্য পরিপূর্ণভাবে তৈরি হতে এসএসসি উত্তীর্ণদের জন্য একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান হতে পারে ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও পিছিয়ে নেই ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ক্লাব, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন ইনডোর গেমের মাধ্যমে গড়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ। ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ‘চাইল্ড অ্যান্ড ইয়ুথ ফিন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল (সিওয়াইএফআই) ’, যুক্তরাজ্যের ‘কনফেডারেশন অব টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি’, ভারতের ‘ভিনসিস আইটি সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড’, ‘ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ’ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ‘ওয়াও ফ্যাক্টর’। সচেতন ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এ প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কর্মশালা করে থাকে।
নানাবিধ শিক্ষাবান্ধব সুবিধায় পরিপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি অর্জন। সেগুলোর মধ্যে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ‘বিন’ কর্তৃক ‘এক্সিলেন্স ইন বিজনেস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০১৪ ’, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি কর্তৃক ‘এডুকেশন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০১২’ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া রয়েছে দেশের বিভিন্ন কারিগরি দক্ষতায় ‘সেরাদের সেরা’র অ্যাওয়ার্ড।
তাই ভবিষ্যৎ বিশ্বকে মানসম্মত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করা ক্যাম্পাসটি অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।