সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন: আইনমন্ত্রী

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক এই সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মহাখালী, ঢাকা, ২১ মে
ছবি: দীপু মালাকার

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আবারও বলেছেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করা হবে। আজ রোববার ঢাকার মহাখালীতে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র নিয়ে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গৃহীত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ৭৫ বছর উপলক্ষে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয় ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এই সংলাপ আয়োজন করে। সংলাপ সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রোধ করার জন্য বা গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী তাঁরা এটি করতেও পারেন না। সাইবার অপরাধের বিষয়ে আইনটি করা হয়েছে। আইনের অপব্যবহার যাতে না হয় সেজন্য তিনি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর কিছু স্থায়ী সমাধান দরকার। তাই আইনটিতে কিছু সংশোধনী আনা হবে।

সংলাপে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কতগুলো ধারার শাস্তি দণ্ডবিধির চেয়ে কঠোর; যেমন ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারা। এমনকি কোনো কোনো অপরাধ পুনরায় করার জন্য যাবজ্জীবনের মতো সাজা হতে পারে।

এসব বিভিন্ন ধারার কথা উল্লেখ করে আহসান আদেলুর রহমান বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলো এগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বড় বাধা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য চ্যালেঞ্জ। এ জন্য তিনি আইনটি পর্যালোচনা করে আরও সুনির্দিষ্ট করা ও সাজা কমানোর আহ্বান জানান।

আইনটির অপব্যবহার হচ্ছে এবং অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, বর্তমান সাইবার অপরাধের জন্য আইনটির পক্ষে তিনি। কিন্তু অবশ্যই এটি সংশোধন করতে হবে।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক কার্যালয়ের উদ্যোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক এই সংলাপ অনুষ্ঠানে আলোচকেরা। মহাখালী, ঢাকা, ২১ মে

সংশোধনের ক্ষেত্রে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, প্রথমত আইনের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এ জন্য বিস্তারিতভাবে আইনটি পর্যালোচনা করতে হবে। দ্বিতীয়ত জামিনযোগ্য ধারা বাড়াতে হবে এবং শাস্তি কমাতে হবে। অপরাধের সংজ্ঞাগুলো আরও সুনির্দিষ্ট করতে হবে। কারণ, আইনটিতে অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। পুলিশের একজন উপপরিদর্শকের হাতে অঢেল ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে আগে অভিযোগটি প্রেস কাউন্সিলে পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, প্রেস কাউন্সিলও উচ্চ আদালতের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে পরিচালিত হয়।

আইনের কিছু ধারার সাজা অনেক বেশি উল্লেখ করেন মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, কিছু অপরাধের সাজা আছে ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা। কিন্তু একজন সাংবাদিক হিসেবে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেন, কোনো সাংবাদিকদের পক্ষেই ১ কোটি টাকা জরিমানা দেওয়া অসম্ভব ব্যাপার। হয়তো ১০ বছর জেল খাটতে পারবেন।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন। তিনি বলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে অধিকাংশ সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম এখন ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ (নিজ থেকে চেপে যাওয়া) করে। কিন্তু সেলফ সেন্সরশিপ করে কোনো দেশ সমৃদ্ধ হতে পারে না।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মাহফুজুল আজিজ।