কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছে দুর্নীতিবিরোধী এই সংস্থা। একই সঙ্গে চলমান সংকটের শান্তিপূর্ণ ও সংবিধানসম্মত সমাধান চেয়েছে টিআইবি।
আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায় টিআইবি। বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইতেখারুজ্জামান বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। প্রথম দিকে শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ পালনের ক্ষেত্রে সরকার সহিষ্ণু আচরণ করেছিল। এতে সবার মনে আশার সঞ্চার করে। কিন্তু গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক সহিংস হামলা করা হলো। হামলায় প্রকাশ্যে নারী শিক্ষার্থীদেরও নির্বিচার আঘাত করা হলো। তাদের অসম্মান করা হলো।
বিবৃতিতে বলা হয়, আজ মঙ্গলবার রংপুরে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। টিআইবি এই হামলা ও মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কিত, ক্ষুব্ধ ও হতাশ। হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দলমত-নির্বিশেষে চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের উচিত হবে আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে যেন অস্বীকার না করা হয়। বরং কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিক, যুগোপযোগী, শান্তিপূর্ণ ও সংবিধানসম্মত ইতিবাচক সমাধানের যেন উদ্যোগ নেওয়া হয়।
টিআইবি প্রত্যাশা করে, সরকার কোনো অবস্থাতেই চলমান সংঘাত উসকে দেবে না। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন দমনের পথে হাঁটবে না। সরকার শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে।
টিআইবি বলেছে, আন্দোলনকারীরাও যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে যৌক্তিক দাবি আদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে আন্দোলনকারীদের।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকার–সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ও বহিরাগত সন্ত্রাসীর আক্রমণ না ঠেকানোর দায় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এড়াতে পারে না। সংঘাতের দায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর চাপানোর চেষ্টা চলছে। অথচ শিক্ষার্থীদের ওপর প্রথম সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে। এই হামলা ঠেকাতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সহিংসতায় জড়িত সবাইকে নির্মোহ ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব মুক্তভাবে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
চলমান আন্দোলনে সব পক্ষকে সংযত ও যৌক্তিক আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।